Monday 27 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা জোরদারে একমত ঢাকা ও ইসলামাবাদ

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩২ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:১৩

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বাণিজ্য, কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি, খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা আরও জোরদারের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে ঢাকা ও ইসলামাবাদ।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) নবম বৈঠকে এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করে দুই পক্ষ।

দুই দশক পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ জেইসি বৈঠক হয়েছিল ২০০৫ সালে। দুই দশক পর এ প্ল্যাটফর্মের পুনরায় কার্যক্রম শুরু হওয়াকে উভয় পক্ষই তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

বিজ্ঞাপন

জেইসি বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। এতে দুই দেশের বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন, কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি ও সামুদ্রিকবিষয়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আলোচনায় কৃষি, বাণিজ্য, তথ্য-প্রযুক্তি, খাদ্য, বিমান ও নৌপরিবহনসহ নানা খাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যার লক্ষ্য দুই দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন।’

তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক। ২০ বছর পর আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করেছি এবং এটি অত্যন্ত সফল হয়েছে।’

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি, খাদ্য, সামুদ্রিক পরিবহন ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে উভয় দেশ উপকৃত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি কেবল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকেও এগিয়ে যেতে চাই।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এভাবে সহযোগিতা করে, তাহলে তা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে। আমরা এই সহযোগিতা কাঠামো আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছি।’

তিনি জানান, আলোচ্য বিষয়গুলোর অগ্রগতি তদারকির জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও নৌপরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নির্দিষ্ট ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হবে।

বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়নি। নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। কৃষি, গবেষণা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আইটি-সংক্রান্ত সহযোগিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’

সফররত পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক জেইসি বৈঠক আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘২০ বছর পর জেইসি বৈঠক হওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই ইতিবাচক গতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে এগিয়ে যেতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন খাতে উভয় দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া গেছে এবং এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তা আরও কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই সহযোগিতা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব এবং পরবর্তী জেইসি বৈঠকে মিলিত হলে যেন উভয় দেশের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোয় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করতে পারি।’

বাণিজ্য ঘাটতি কমানো প্রসঙ্গে মালিক বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন এক বিলিয়ন ডলারেরও কম, যদিও দুই দেশেই বিপুল জনসংখ্যা ও পরস্পর পরিপূরক অর্থনীতি রয়েছে। আমাদের উচিত বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো এবং একে অপরের উন্নয়নে সহায়তা করা।’

তিনি জানান, পাট বা পাটজাত পণ্যের বাইরে কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে পাকিস্তান আগ্রহী এবং অতিরিক্ত কৃষিপণ্য সংগ্রহের সম্ভাবনা খুঁজছে। এ ছাড়া পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছ থেকে আমদানি অব্যাহত রাখবে এবং কৃষি, ওষুধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র অনুসন্ধান করবে।

তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমরা পাটের বাইরেও সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করব, যদিও পাট এই সহযোগিতার একটি প্রধান উপাদান হিসেবেই থাকবে।’ তিনি আরও জানান, জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আজ আরও আলোচনা হবে।

সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফরের প্রসঙ্গ টেনে মালিক বলেন, ‘পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী গত আগস্টে বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং দুই দেশই বহুপাক্ষিক ফোরামে উচ্চপর্যায়ে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব আরও জোরদার হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই ইতিবাচক গতি ধরে রাখব।’

বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সম্প্রসারণ, সহযোগিতার সম্মত ক্ষেত্রগুলোকে কার্যকর করার এবং নির্ধারিত লক্ষ্যে পরবর্তী জেইসি বৈঠকে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) একটি দ্বিপাক্ষিক ফোরাম, যা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। ২০২৫ সালে জেইসি পুনরায় চালুর মাধ্যমে দুই দেশ অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারে নতুন অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে।

সারাবাংলা/একে/এইচআই
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর