নীলফামারী: জেলার সৈয়দপুরে প্রশাসনিক জটিলতা ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩টা থেকে শহিদ ক্যাপ্টেন মৃধা সামসুল হক সড়ক (বিমানবন্দর রোড) অবরোধ করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচি চালিয়ে যান।
দিনব্যাপী চলমান এই বিক্ষোভে ওই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চলাকালে ‘শিক্ষকদের বেতন চালু করো’ ও ‘প্রশাসনিক জটিলতা বন্ধ করো’ স্লোগান দেন।
লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাহিব আল নাহিয়ান বলেন, ‘আমরা তো আমাদের টিউশন ফি সময় মতোই দিচ্ছি, তাহলে আমাদের শিক্ষকরা কেন বেতন পাবেন না? আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমাদের স্যারদের বেতন বন্ধের জন্য সভাপতি দায়ী। আমরা এমন সভাপতি চাই না, যে সভাপতির কারণে আমাদের শিক্ষকদের হেনস্তা করা হচ্ছে।’
আরেক শিক্ষার্থী রাইসা জাহান বলেন, ‘আমরা কিছু জানি না বা জানতেও চাই না। আমরা শুধু চাই আমাদের প্রাণের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হোক এবং জালিয়াতি বা হেনস্তার পেছনে যার হাত রয়েছে, তার বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।’
সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুরের সভাপতি জাকির হোসেন মেননের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। সভাপতির সই জটিলতার কারণে ১৭০ জন শিক্ষক-কর্মচারী সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পাননি। অভিযোগ রয়েছে, মেনন ইচ্ছাকৃতভাবে নবনিযুক্ত সভাপতির কাছে চেক সইয়ের ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন না, যার ফলে বেতন দিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
এর আগে, গত ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে ১৬ দফা দাবি তুলে লিখিত আবেদন করা হয়, যার মধ্যে ছিল পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ নিয়োগ, বন্ধ প্রভিডেন্ট ফান্ড পুনরায় চালু ও সভাপতির অনিয়ম বন্ধের দাবি। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না করে সভাপতি উলটো দুই সিনিয়র শিক্ষককে কর্মবিরতির নির্দেশ দেন।
পরে ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে গণদরখাস্ত দেন এবং সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও নূর-ই-আলম সিদ্দিকীর হস্তক্ষেপে ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতি শাফিয়ার রহমান ও অধ্যক্ষ মশিউর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে পরবর্তীতে ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন মেনন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেই সিদ্ধান্তের অনুমোদন আটকে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানে জটিলতা আরও গভীর হয়।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি আন্দোলনের স্থানে গিয়েছিলাম। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’