ঢাকা: সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে উল্লেখিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলান সাপেক্ষে কোনো আইটেম বা অর্থনৈতিক কোডে বরাদ্দ বাড়ানো-কমানো যাবে। এছাড়া উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
অতি সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন’ শীর্ষক জারি করা বাজেট পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নিজ নিজ সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন নির্ধারিত ফরমে আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারের অগ্রাধিকার খাতসমূহে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতায় সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের চলতি অর্থবছরের বাজেট সুষ্ঠু ও সময়মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
পরিপত্রে সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে বিদ্যমান নীতিমালার পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছসাধনে গত ৮ জুলাই অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত পরিপত্র অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
পরিপত্র অনুযায়ী, পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক, অনবাসিক এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে ইতোমধ্যে যে পরিমাণ অর্থের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র সে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা যাবে;
সব ধরনের যানবাহন (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) ক্রয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পরিচালন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখতে হবে;
অত্যাবশ্যকীয় ছাড়া পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারের নিজস্ব অর্থে সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ/ওয়ার্কশপ/সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে।
বাজেট পরিপত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সংশোধিত পরিচালন ব্যয় প্রণয়নের বিষয়ে বলা রয়েছে- পরিচালন ব্যয় প্রাক্কলনে পূর্ববর্তী দুই (২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের ব্যয়ের ধারা বিবেচনায় নিতে হবে।
‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে তা উল্লেখ করতে হবে।
বাজেট পরিপত্রে সংশোধিত রাজস্ব ও মূলধন প্রাপ্তি প্রাক্কলনের হিসাবের বিষয়ে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে গত দুই (২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের ধারা বিবেচনায় নিতে হবে।
পরিপত্রে সংশোধিত ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী’ (এডিপি) প্রণয়নের বিষয়ে বলা হয়েছে, সংশোধিত এডিপি-তে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখতে হবে এবং মূল সংশোধিত এডিপি-তে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না;
সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার বাছাই করে অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে;
সংশোধিত এডিপি’র মূল অংশে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না;
চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে- এমন সব প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে;
ধীরগতি সম্পন্ন প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন গতিসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে;
বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘুর্ণিঝড় ও বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।
অপরিহার্য নতুন প্রকল্পে স্থানীয় মুদ্রা বরাদ্দের ক্ষেত্রে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় মুদ্রার বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে;
বৈদেশিক ঋণ/অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এবং চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এমন সব প্রকল্প সংশোধিত এডিপি-তে অগ্রাধিকার পাবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিল/জি অংশ সম্পূর্ণ ব্যয় করা যাবে এবং সেক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের অংশে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে;
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের এডিপি-বহির্ভূত যেসব প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেসব প্রকল্প সংশোধিত এডিপি-তে বরাদ্দসহ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। অননুমোদিত কোন স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না।
এছাড়া মূল বাজেটে ছিল না, এমন কোন সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না। চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে তা উল্লেখ করতে হবে।
উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে জিওবি বাবদ সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয় বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত বরাদ্দ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।