ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর পেনহা ফাবেলাতে পুলিশি অভিযানের পর (দরিদ্র বস্তি এলাকা) রাস্তার পাশে ৬০টিরও বেশি মৃতদেহ সারিবদ্ধভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে এই দৃশ্য দেখা গেছে বলে জানান রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্য কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার বলেছিল, একটি বড় মাদক চক্রকে লক্ষ্য করে চালানো এই অভিযানে চারজন পুলিশ অফিসারসহ কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।
ব্রাজিলীয় গণমাধ্যম এবং ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো মঙ্গলবারের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের সংখ্যা হালনাগাদ করার কথা ছিল।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মানুষজনের ভাষ্যমতে, স্বজনদের খুঁজতে আসা স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের আবাসস্থলের পেছনের বনভূমি এলাকা থেকে অনেক মৃতদেহ সংগ্রহ করেছিলেন। ছবিগুলোতে দেখা যায়, লম্বা সারিতে রাখা মৃতদেহগুলোর উভয় পাশে শোকাহত এবং উৎসুক জনতা জড়ো হয়েছে, যার মধ্যে কিছু কাপড় বা ব্যাগ দিয়ে ঢাকা ছিল।
নিহতদের একজনের মা তাউয়া ব্রিটো বলেন, ‘আমি শুধু আমার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে গিয়ে কবর দিতে চাই।’
এই পুলিশি অভিযানটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন রিও শহরে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন (কপ৩০) সম্পর্কিত বৈশ্বিক ইভেন্টগুলো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মেয়রদের বৈশ্বিক সম্মেলন সি৪০ এবং ব্রিটিশ প্রিন্স উইলিয়ামের আর্থশট প্রাইজ।
গত দশকে রিও বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক ইভেন্টের আয়োজন করেছে, যেমন ২০১৬ সালের অলিম্পিক, ২০২৪ সালের জি২০ শীর্ষ সম্মেলন এবং জুলাই মাসে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন—তবে মঙ্গলবার দেখা যাওয়া সহিংসতার মতো এমন মাত্রা ছিল না।
রিও রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এই অভিযানটি ছিল মাদক চক্রকে লক্ষ্য করে চালানো তাদের এ যাবৎকালের বৃহত্তম অভিযান। এই চক্রটি শহরের পাহাড়ি সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠা দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ বসতিগুলো—ফাবেলাগুলোতে—মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এখনো এই অভিযান নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার বিচারমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছিলেন, সরকার রাজ্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সহায়তার অনুরোধ পায়নি।
বেশ কয়েকটি নাগরিক সমাজ গোষ্ঠী এই সামরিক ধাঁচের অভিযানে বিপুল সংখ্যক হতাহতের সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর বলেছে, এটি ব্রাজিলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো পুলিশি অভিযানে চরম প্রাণঘাতী পরিণতি ঘটার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এবং দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’