Thursday 30 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিস্টেম জালিয়াতি
সঞ্চয়পত্রের ২৫ লাখ টাকা তুলে নিল ছাত্রদল নেতা!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:০৯

সিস্টেম জালিয়াতি। ফাইল ছবি

ঢাকা: জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের এনএসসি সিস্টেম জালিয়াতি করে সঞ্চয়পত্রের ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মামলাও হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ বাদী হয়ে বুধবার (২৯ অক্টোবর) মামলাটি করেন। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. আরিফুর রহমান, মোহাম্মদ মারুফ এলাহী, আল আমিন ও মহিউদ্দিন আহমেদ।

এরই চারজনের মধ্যে আরিফুর রহমানকে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মতিঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।’

বিজ্ঞাপন

এই ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলার আসামিদের মধ্যে মোহাম্মদ মারুফ এলাহী এই চক্রের হোতা। তিনি ছাত্রদলের বিগত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তার আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।

মোহাম্মদ মারুফ এলাহীর বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘মারুফ এলাহী আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে তার কোনো পদপদবি নেই।’

এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে টাকা তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার মহা হিসাব নিরীক্ষণ কার্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এস এম রেজভীর আয়কর রিটার্ন পূরণ করতে গিয়ে দেখেন তার নামে কেনা ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ১৩ অক্টোবর তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রেভজী সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার কোনো আবেদন করেননি। পরে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন, টাকা লেনদেনের সীমা ২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা করাসহ নানাভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ২৩ অক্টোবর সঞ্চয়পত্রের ওই ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া, আরও দুই ব্যক্তির নামে থাকা ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল চক্রটি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।

কীভাবে এই জালিয়াতি

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কেনার সময় যে ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেবেন, সেই হিসাবেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, কোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল নেওয়ার জন্য অবশ্যই সেই অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকের দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) যায়। উপস্থিত গ্রাহক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে তৎক্ষণাৎ সেই ওটিপি দেখানোর পর তা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পরিবর্তন করা হয়। সব ক্ষেত্রে সার্ভারে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা প্রমাণ থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, ওখানে যেসব কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাদের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে এই জালিয়াতি করা হয়েছে। তবে দেড় বছর ধরে অনেক ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন গ্রাহকেরা। এসব ব্যাংকে প্রবাসী আয় বা সঞ্চয়পত্রের টাকা এলেও গ্রাহকেরা উত্তোলন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে সম্প্রতি ব্যাংক পরিবর্তনের আবেদন করছেন অনেকে। গ্রাহকের সমস্যা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর দিক থেকে ব্যাংক পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই কেউ কেউ জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

যা ঘটেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে গত বৃহস্পতিবার ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন এক ব্যক্তি। তার ব্যাংক হিসাবটি আছে অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। চার দিনের মাথায় গত সোমবার এই সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয় এবং টাকা নেওয়া হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য এক ব্যক্তির হিসাবে। ওই টাকা জমা হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়।

একই প্রক্রিয়ায় একই দিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে তা আটকে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি ঘটনায় সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে। গ্রাহকেরা জানিয়েছেন, তারা সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর জন্য আবেদন করেননি। ফলে তাদের মোবাইল ফোনে কোনো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডও (ওটিপি) যায়নি। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের যে তিন কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন করে অন্য তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এই জালিয়াতি করা হয়েছে। ফলে যাদের কাছে পাসওয়ার্ড ছিল, তারা নজরদারিতে আছেন। এ ছাড়া, বাইরের আরও কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর