বগুড়া: বগুড়ায় চলতি মৌসুমের উঠতি ফসল আমন ধান গোলায় ভরার দিনক্ষণ গুনছিলেন কৃষক। কিন্তু ঠিক সেই মুহুর্তে কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে টানা সতের ঘণ্টার বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় শস্যভান্ডারখ্যাত বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেতের ফসল বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফলে পানিতে ভাসছে হাজারো কৃষকের সেই লালিত স্বপ্ন। শনিবার (১নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৬১ হাজার ২৭৮ মেট্রিকটন। এর মধ্যে শেরপুর উপজেলায় মোট ২২ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমির ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এছাড়া বিস্তারিত ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব নিরুপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।
জানা যায়, জেলায় টানা সতের ঘন্টার বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে পাকা ও আধাপাকা আমন ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ১২টি উপজেলায় অনেক ক্ষেতের উঠতি ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। অথচ গত তিনদিন আগেও ক্ষেতের চিত্রটা ছিলো ভিন্ন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছিল সবুজের সমারোহ, যা নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কৃষকরা। কিন্তু জমির ধান নুয়ে পড়া ও পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার দৃশ্য দেখে ফলন ও গুণগত মান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।
বগুড়া সদর উপজেলা কৃষক আমিনুর প্রামানিক জানান, এবার তিনি প্রায় ৭ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। এরমধ্যে আগাম জাতের ধান রয়েছে তিন বিঘা। এরইমধ্যে সেই আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করেছেন। কিন্তু ধান বাড়িতে নেওয়ার আগেই সর্বনাশ করেছে বৃষ্টি।
আরেক কৃষক বলেন, ছয় বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। অনেক কষ্ট করে আবাদ করেছেন। এখন ঘরে তোলার পালা। ঠিক সেই মুহুর্তে বৃষ্টি এসে সব নষ্ট করে দিয়েছে। ঝড়ো বাতাসে জমির পাক ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। জমিতে পানি জমে থাকায় ক্ষেতের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
তিনি আরো বলেন, এবারের আকস্মিক বৃষ্টিতে উঠতি আমন ধানের পাশাপাশি রকমারি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে শীতকালীন শাক-সবজি, আগাম জাতের আলু, ধান-ভুট্টা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষ কাজ করতে পারছেন না। তাদের আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, ‘চলমান বৃষ্টির কারণে আমন ধানের ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। যেসব জমিতে ধান শুয়ে পড়েছে। সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে। এতে ক্ষতি কিছুটা কম হবে। আর যেসব ধান পেঁকে গেছে। সেগুলো কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।’