সিরাজগঞ্জ: একসময় ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ। নদীতে মাছ ধরেই চলত সংসার। একপর্যায়ে শরীরে ধরা পড়ে নানা রোগ, দুটি কিডনি অকেজোসহ হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের রানিগ্রামের বাসিন্দা শ্রী গণেশ রাজবংশীর (৪৮) সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার ছোট পরিবার। কিন্তু, ২০২৪ সালের মে মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে শুরু তার জীবনের লড়াই।
বর্তমানে গণেশ রাজবংশীর দুটি কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে। পাশাপাশি হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তিনি। নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্রতি সপ্তাহে দুইবার করে সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনূস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু হয় এই ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়া। এরপর ধানমন্ডিতে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রেও করা হয়। সবশেষ শুরু হয়েছে খাজা ইউনূস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
প্রতিবারের যাতায়াত, ওষুধ ও ডায়ালাইসিস মিলিয়ে সপ্তাহে খরচ হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার টাকা। আবার রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হলে সেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এভাবে প্রতি মাসেই প্রায় ৬০ হাজার টাকা চিকিৎসা ব্যয় করতে হচ্ছে শ্রী গণেশ রাজবংশীর পরিবারের। পরিবারের গোছানো যে সম্পদ ছিল, তা দিয়ে এতদিন চিকিৎসা করালেও এখন আর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
গণেশ রাজবংশীর স্ত্রী তাপশী রাণী রাজবংশী বলেন, ‘আমাদের সংসারে আমার স্বামী কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। আজ তিনি অসুস্থ, মাসে অনেক টাকার প্রয়োজন। কেউ যদি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিতেন, আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতাম আজীবন।’
ছেলে হৃদয় কুমার রাজবংশী সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এ বছর অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। কলেজ জীবন থেকেই টিউশন করিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা আয় করলেও বাবার চিকিৎসার খরচের তুলনায় তা খুবই সামান্য। পরিবারে মা ও ছোট বোনসহ চার সদস্যের জীবন-জীবিকা এখন টানাপোড়েনে কাটছে।
ছেলে হৃদয় কুমার রাজবংশী বলেন, ‘যা ছিল সব বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা করেছি। এখন আর পারছি না। শহর সমাজসেবা কার্যালয়েও গিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি। একেক সময় একেক কাগজপত্র তারা চাচ্ছে। শেষে মান সম্মানের কথা না ভেবে ফেসবুকে মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছি। কত যে কেঁদেছি, সেটি বলে বুঝাতে পারব না। প্লিজ, আমার বাবাকে বাঁচান। আমাদের সহযোগিতা করুন।’
হৃদয়ের বন্ধু আনজারুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় বছর ধরে গণেশ কাকা অসুস্থ। আমরা বন্ধুরা যতটুকু পেরেছি সাহায্য করছি। সমাজের বিত্তবান ও মানবিক মানুষ যদি এগিয়ে আসে, হয়তো একজন বাবাকে বাঁচানো যেত।’
প্রতিবেশীরা বলেন, অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ। প্রতিদিন ভোরে নদীতে মাছ ধরতে যেতেন। তার উপার্জনেই চলত পুরো সংসার। এখন চিকিৎসার ভারে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
সিরাজগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করতে বলেন অথবা আমার সঙ্গে দেখা করতে বইলেন। আমি বিষয়টি দেখব।’
এই পরিবারের এখন একটাই চাওয়া, শ্রী গণেশ রাজবংশী যেন আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। আর হৃদয় কুমার রাজবংশীর আকুতি, মানুষের একটু সহায়তা পেলে বাবাকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব।