Sunday 02 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অল সোলস ডে
আলো জ্বেলে দুঃখ-ব্যথার গ্লানি মোছার প্রার্থনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ নভেম্বর ২০২৫ ২২:১১ | আপডেট: ২ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৫২

সম্মিলিত প্রার্থনায় পুরো গির্জাজুড়ে আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যথাযোগ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে চট্টগ্রামে পালিত হয়েছে ‘অল সোলস ডে’ বা ‘মৃত আত্মার শান্তি কামনা দিবস’। সন্ধ্যার নামার মুহূর্তে প্রয়াত স্বজনদের সমাধিতে মোমের আলো জ্বালিয়ে সম্মিলিত প্রার্থনায় শরিক হয়েছেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা।

প্রতিবছরের মতো এবারও ২ নভেম্বর (রোববার) চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় রাণী জপমালা গির্জায় সবচেয়ে বড় সমাগম হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ধর্মপল্লিতে অবস্থিত ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে সমবেত হন।

গোধূলি বেলায় হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু হাতে মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্বজনের সমাধির সামনে। কারও চোখ ছলছল করছিল, কারও-বা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। মোমবাতি প্রজ্বলনের পাশাপাশি প্রয়াতদের সমাধিতে ফুল ছিটিয়ে প্রার্থনায় শরিক হন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। সম্মিলিত প্রার্থনায় পুরো গির্জাজুড়ে আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অশ্রুসিক্ত নয়নে দুঃখ ও ব্যথার সব গ্লানি মুছে দেওয়ার জন্য জগৎপিতার কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করেন স্বজনেরা।

বিজ্ঞাপন

সম্মিলিত প্রার্থনায় পুরো গির্জাজুড়ে আবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ছবি: সারাবাংলা

রাণী জপমালা গির্জায় শোক ও প্রার্থনা সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে পৌর‌হিত‌্য ক‌রে‌ন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ ল‌রেন্স সুব্রত হাওলাদার। সঙ্গে ছিলেন আরও চারজন পুরোহিত।

প্রার্থনার পর আর্চবিশপ ল‌রেন্স সুব্রত হাওলাদার দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের আত্মার কল্যাণের জন্য আমরা এখানে মিলিত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা একদিন ঈশ্বরের কাছ থেকে এ পৃথিবীতে এসেছি, আবার পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের ঈশ্বরের কাছে গিয়ে মিলিত হতে হবে। তিনি যেহেতু পবিত্র, আমাদেরও পবিত্র হতে হবে। যাদের পবিত্র জীবনের কিছুটা ঘাটতি আছে, তারা যেন সেই পবিত্রতা অর্জন করতে পারে, সেজন্য আজকের বিশেষ প্রার্থনা। এটা আমাদের ধর্মীয় দর্শন, ধর্মীয় বিশ্বাসের একটা উদযাপন।’

চট্টগ্রামের বিভিন্ন ধর্মপল্লিতে অবস্থিত ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে সমবেত হন। ছবি: সারাবাংলা

এর আগে সম্মিলিত প্রার্থনায় শরিকদের উদ্দেশে তিনি ব‌লেন, ‘প্রতিবছর ২ ন‌ভেম্বর আমরা কবরস্থা‌নে আসি, কবর সাজাই, মোম জ্বালাই। ত‌বে সবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৃত আত্মীয়স্বজ‌নের আত্মার জন‌্য প্রার্থনা ক‌রা, তা‌দের না‌মে জগ‌তে মঙ্গল কাজ করা। আজ পূণ্যভূমিতে, যে মাটিতে আমাদের প্রিয়জনেরা শায়িত আছেন, সে মাটিতে দাঁড়িয়ে পরমপিতাকে প্রণতি জানাই যেন তুমি তাদের মাঝ থেকে মৃত্যুর অন্ধকার দূর করে দাও। এই আলো অনন্তশিখার মতো আমাদের অন্তরে প্রজ্বলিত থাকুক।’

মোমবাতি প্রজ্বলনের পাশাপাশি প্রয়াতদের সমাধিতে ফুল ছিটিয়ে প্রার্থনায় শরিক হন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। ছবি: সারাবাংলা

মোমবাতি প্রজ্বলনের পাশাপাশি প্রয়াতদের সমাধিতে ফুল ছিটিয়ে প্রার্থনায় শরিক হন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। ছবি: সারাবাংলা

‘আমাদের বিশ্বাস এই অনির্বাণ আলোকশিখার দীপ্ত আগুনে কবরে শায়িত আমাদের প্রিয়জনেরা শুদ্ধ হয়ে তোমার সান্নিধ্য লাভ করবে। তুমি মৃত্যুঞ্জয় রূপে যুগে যুগে বিরাজমান হও হে প্রভু। হে জীবনময় পরমেশ্বর, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তুমি আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করো।’

প্রার্থনা শেষে খ্রিস্ট ভক্তদের জন্য খ্রিষ্টপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। ‘অল সোলস ডে’ উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন গির্জায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম