Monday 03 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেটজুড়ে তোলপাড়, বারাকা কাণ্ডে ডুবলেন ফয়ছল ও মিজান

জুলফিকার তাজুল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৪৯ | আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৩৬

মিজানুর রহমান চৌধুরী ও ফয়ছল আহমেদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সিলেট: সিলেট অঞ্চলের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বিএনপির মনোনয়ন তালিকা। সারাদেশে ঘোষিত ২৩৭টি আসনের প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের প্রায় সব পুরনো মুখ টিকে থাকলেও বাদ পড়েছেন দুই হেভিওয়েট নেতা—সিলেট-৬ আসনের ফয়ছল আহমেদ চৌধুরী এবং সুনামগঞ্জ-৫ আসনের মিজানুর রহমান মিজান।

দলের ভেতরে জোর গুঞ্জন, এই দুই প্রভাবশালী নেতা ‘বারাকা কাণ্ড’ ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে দলীয় আস্থার বাইরে চলে গেছেন।

বিএনপির সর্বশেষ মনোনয়ন তালিকা অনুযায়ী সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের বেশির ভাগে আগের প্রার্থীরাই বহাল রয়েছেন। কিন্তু সিলেট-৬ ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনে দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রম। একটিতে নতুন মুখ, অন্যটিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে পুরনো প্রার্থীকে।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের নির্বাচনে দুজনই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন, ফলে এবারও তাদের মনোনয়ন প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু গুঞ্জন সত্যি হয়েছে—দুজনেই তালিকার বাইরে। দলীয় সূত্র বলছে, ফয়ছল ও মিজান দুজনেরই দলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা রাজনীতির চেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েন।

স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোগ, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন এবং সরকারপন্থী সুবিধা নিয়েছেন—যা দলের অনেক সিনিয়র নেতার কাছে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিশেষ করে বারাকা পাওয়ারসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং সরকারি অনুমোদননির্ভর ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, আন্দোলনমুখী রাজনীতির এই সময়ে এমন প্রার্থীর বদলে মাঠের সক্রিয় নেতৃত্ব প্রয়োজন।

দলীয় নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন বঞ্চিত দুই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—তারা ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে বারাকা পাওয়ার এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা দলের ভেতরে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।

এক সিনিয়র নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করে যারা লাভবান, তারা আন্দোলন বা ভোটের মাঠে দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না।’ বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এবার প্রার্থী বাছাইয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ‘রাজনৈতিক কমিটমেন্ট’কে।

এক নেতা বলেন, ‘যারা বিগত কয়েক বছরে মাঠে ছিলেন না, আন্দোলনে অংশ নেননি, শুধু অর্থবল আর যোগাযোগের ওপর নির্ভর করেছেন—তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।’ এমন সিদ্ধান্তকে দলের অন্যান্য বিতর্কিত নেতাদের জন্যও সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিলেট বিভাগ ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। তবে দীর্ঘ অনুপস্থিতি, নেতৃত্বের বিভাজন ও অর্থকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এবার বিএনপি সেই ‘ইমেজ রিসেট’ করতে চাইছে—অর্থাৎ বিত্তবান বা সুবিধাভোগী প্রার্থীর বদলে মাঠের সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের সামনে আনছে, যাতে ভোটারদের আস্থা ফিরে পাওয়া যায়।

সব মিলিয়ে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় সিলেট অঞ্চলে এবার দেখা যাচ্ছে পুরনো ও নতুন মুখের মিশেল। কিন্তু ফয়ছল আহমেদ চৌধুরী ও মিজানুর রহমান মিজানের মতো দুই হেভিওয়েট নেতার বাদ পড়া দলের ভেতর এক বড় বার্তা দিয়েছে—দলীয় অবস্থান এখন স্পষ্ট: শুধু প্রভাব নয়, মাঠের কর্মীদের পাশে থাকা নেতাই প্রার্থী হবেন।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ‘বারাকা কান্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগই তাদের বাদ পড়ার মূল কারণ।

একজন জেলা বিএনপি নেতা মন্তব্য করেন, ‘বারাকা কান্ডই এই দুই নেতার পতনের কারণ।’ অন্যদিকে, তাদের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র—যেখানে ব্যক্তিগত আক্রমণকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ সব মিলিয়ে সিলেটের রাজনীতিতে ফয়ছল– মিজান পর্ব এখন নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—বারাকা কাণ্ডে শুধু ব্যবসার নয়, পুড়েছে দুই নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও।

সারাবাংলা/জিজি