ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কটন ইউএসএ এর উদ্যোগে মার্কিন তুলা রফতানিকারকদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, মার্কিন তুলার ব্যবহার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে ঘোষিত নতুন শুল্ক সুবিধা কাজে লাগানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন— ইকম-এর লি ইন, কারগিলর ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসির ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রির ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনর ওয়েন বোসম্যান, স্ট্যাপলকটন কো-অপারেটিভ-এর ক্রিস জোন্স, এবং কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল-এর উইল বেটেনডর্ফ ও আলী আরসালান।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা।
আলোচনায় বাংলাদেশের পোশাক খাতে মার্কিন তুলা সরবরাহের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। মূল ফোকাস ছিল সম্প্রতি ঘোষিত মার্কিন নির্বাহী আদেশ, যেখানে পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ক্ষেত্রে নতুন আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এই নতুন শুল্ক ছাড়ের সুযোগ আমাদের শিল্পখাতের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা এনে দিয়েছে, যা আমাদের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।’
তবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই সুবিধা বাংলাদেশের স্পিনার ও পোশাক কারখানাগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাভ করবে, সে বিষয়ে এখনো বিজিএমইএ’র কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।’
বিজিএমইএ সভাপতি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান, তারা যেন মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ এনে বিজিএমইএ’কে সরবরাহ করেন। এতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিলম্ব না করে শুল্ক সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ।’
তিনি মত প্রকাশ করেন, ‘মার্কিন তুলার উচ্চ গুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধা নিয়ে বিশদ গবেষণা করে স্পিনার ও কারখানাগুলোকে তথ্য সরবরাহ করা হলে তারা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন। মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএ সভাপতির এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিনিধিরা বলেন, ‘বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন তুলা তার টেকসই গুণাবলী, নির্ভরযোগ্যতা এবং উচ্চমানের জন্য সুপরিচিত।’
তারা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, মার্কিন তুলা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারকরা তাদের পণ্যের মান আরও উন্নত করতে পারবে এবং মার্কিন বাজারে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পারবে।’
বৈঠকে বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন তুলা সরবরাহ আরও সহজ ও দ্রুত করতে লজিস্টিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের উপায় নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি তরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি ওয়্যারহাউজ স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়েও মতবিনিময় করা হয়, যা বাস্তবায়িত হলে শিল্পের লিড টাইম কমবে। উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।