ঢাকা: দেশের চার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের পালা। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জকসু নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। তবে রোডম্যাপ ঘোষিত সময়সূচি নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান করছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। এ নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনে পৃথক পৃথক স্মারকলিপিও দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন সময় পরিবর্তন ও নির্ধারিত সময়ের ওপর অটুট থেকে নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। উল্লেখ্য, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২৭ নভেম্বর ভোটগ্রহণ ও অফিসিয়াল ফলাফল প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করা আছে।
এর আগে ২৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে একটি আলোচনা সভা আয়োজন করে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের কাজের সুবিধার জন্য নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ১০ ডিসেম্বর করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ভিন্ন মত দেয়। সেইসঙ্গে তারা নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারক লিপিও প্রদান করে। পাশাপাশি বাকি ছাত্রসংগঠনগুলোও তাদের মতামত জানিয়ে স্মারকলিপি দেয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি ও সেমিস্টার ফাইনাল বিবেচনায় ২৭ নভেম্বর নির্বাচন সম্ভব না হলে যেন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। তবে, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ-বাংলাদেশ) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রতি সমর্থন দিয়ে ভিন্ন স্মারকলিপিতে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত ২৭ নভেম্বরে জকসু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তারা জোড় দিয়ে বলেন, কোনো অজুহাতে নির্বাচনের তারিখ পেছানো যাবে না।
জবি ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন ২৭ নভেম্বর কিংবা ২২ ও ২৩ ডিসেম্বরও সমর্থন করছি না। নির্বাচন কমিশনের যতটুকু যৌক্তিক সময় প্রয়োজন সেই সময়ের পরই যেন নির্বাচন সম্পন্ন করে।’ তিনি বলেন, ‘২৭ নভেম্বর নির্বাচন নিলে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। আবার কাজের অজুহাতে যেন খুব বেশি সময় না নেওয়া হয়। যৌক্তিক সময় শেষে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।’
এ প্রসঙ্গে জবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে একটি রোডম্যাপও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিশেষ একটি দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্বাচন পেছানোর পরিকল্পনা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমিশন ১০ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন নেওয়ার চেষ্টা করলে সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের দামামা বেজে উঠবে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস, বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবসসহ শীতকালীন ছুটিও রয়েছে। এ সব বিবেচনায় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না।’
অপরদিকে জবি ছাত্রদল নির্বাচনের তারিখ নিয়ে স্মারকলিপিতে লিখেছে, ‘ডাকসু তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসু ৪৪ দিন, রাকসু ৮০ দিন, জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সময় দিতে হবে। বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনের সময়ের মধ্যে পার্থক্য বিবেচনা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের (জকসু) তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।’
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের সব বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করব।’