ঢাকা: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, শহিদ জিয়া যে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারা শুরু করেছিলেন, তা এগিয়ে নিতে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে শহিদ জিয়া, শ্রমিক জাগরণ, উৎপাদন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘তৎকালীন বাংলাদেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছিল। দেশে কোনো সংসদ ছিল না, মন্ত্রিসভা ছিল না এবং সামরিক বাহিনীসহ সারাদেশে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল। এ চরম সংকটের সময়ই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দেশ পরিচালনার সাহসিকতাপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই নির্বাচনের একটা অবস্থা আসছে। আমাদের ভাবতে হবে…যদি আমরা বিশ্বাস করি যে, শহিদ জিয়ার বিএনপি নতুন কিছু দেয়, নতুন এবং যুগান্তকারী দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য কাজ করে তাহলে আগামী দিনে বিএনপির পক্ষ থেকে যাদের মনোনীত করা হবে তাদের বিজয়ী করার জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্র মানা হয় নাই বলেই কিন্তু যুদ্ধটা হয়েছে। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা হয়েছিলেন তাদের হাতে যদি ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধই হয়তো হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের অভাব-অনটন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং জীবন-জীবিকার অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর তৎকালীন সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে, যা মানুষের মৌলিক অধিকার স্থগিত করে দেয়।’
১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের পরিবর্তন ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে একদলীয় স্বৈরশাসন (বাকশাল) প্রতিষ্ঠার তীব্র সমালোচনা করেন নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ ব্যবস্থায় সব ক্ষমতা (রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, বিচারিক) একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল এবং বিচার বিভাগকে পদানত করা হয়। বহু পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে হাজার হাজার সাংবাদিককে বেকার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ৩ নভেম্বর সামরিক অভ্যুত্থানে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। তবে সাধারণ মানুষ ও সেনাবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এতে ক্ষুব্ধ হয়। ফলস্বরূপ, মাত্র চার দিনের মধ্যে ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা বিপ্লব সংঘটিত হয়, যার মাধ্যমে শহিদ জিয়া মুক্ত হন।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর শহিদ জিয়া যে সব যুগান্তকারী কাজ করেন, তার মধ্যে রয়েছে কৃষি বিপ্লব। দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে নদী ও খাল খনন কর্মসূচি শুরু করেন এবং সেচের জন্য ডিপ টিউবওয়েল ও পাওয়ার টিলারের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে মাত্র দুই বছরে খাদ্য উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়।’
তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন- সুযোগ বারবার আসে না। ৩১ দফা যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, আপনারা নিশ্চয়ই সেটা দেখেছেন…সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বলা আছে, শ্রমিকদের কথা বিশেষ করে বলা আছে। আমরা যদি এ পরিবর্তনে আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনেক কিছুই পূরণ হবে, যেটা শহিদ জিয়া শুরু করেছিলেন, আমরা সেগুলো শেষ করার চেষ্টা করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি যে, আপনারা এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারা সবাই মিলে চেষ্টা করবেন- শুধু ঢাকায় না, আপনি এখানে না, যার যেখানে বাড়ি, যার যেখানে যোগাযোগ আছে, সব জায়গায় চেষ্টা করবেন; যাতে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হন।’
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার-প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন, শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্রমবিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ উজ জামান মোল্লা, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমসহ শ্রমিক নেতারা বক্তব্য দেন।