ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) উদ্যোগে ‘৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য স্মরণে জনতার নয়া রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে রক্ষী বাহিনীর দাপট এবং সেনাবাহিনীর প্রতি ইনফেরিয়র আচরণ সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। এই ক্ষোভ শেখ মুজিবের পতনের অন্যতম একটি কারণ। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে ‘কাউন্টার’ করতে ভারতীয় ন্যারেটিভের মাধ্যমে ৩ নভেম্বর আরেকটি ক্যু এর সৃষ্টি হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন খালেদ মোশাররফ। কিন্তু আওয়ামী লীগ-ভারতপন্থী এই আন্দোলনকে জনগণ ভারতকে প্রস্থাপনের প্রচেষ্টা হিসেবে বুঝতে পারার ফলেই ৭ নভেম্বরের ঘটনা ঘটে। ৭ নভেম্বরের সেই রাতে সিপাহী জনতা অন্তরীণ জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন। অনেকে বললেও জিয়া ক্ষমতা দখল করেননি বরং ‘সিপাহী জনতা উনাকে অন্তরিম থেকে বের করে সিংহাসনে বসিয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন ৭ নভেম্বরকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘যেদিন সিপাহী-জনতা এক হয়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। তাদের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, যেখানে স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে এবং সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি থাকবে।’ ডাকসুর আয়োজিত আলোচনা সভায় বিভিন্ন মত-পথ-দর্শনের মানুষের একত্রিত হওয়াকে সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দেখেন বলে মাহাদী আমিন ডাকসুতে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘৭ নভেম্বরের চেতনা স্মরণ করিয়ে দেয় স্বৈরশাসক ও ফ্যাসিবাদকে রুখতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে হবে। দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের হিরো শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে চার বছরের মাথায় ‘সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি’তে পরিণত হন কারণ তিনি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সংবিধান ধ্বংস করেছিলেন। এর বিপরীতে আবার যিনি রাজনীতি করেন নাই ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন দেশের সেনাপ্রধান ছিলেন তিনি এসে জনগণের নেতা হন। তিনি মানুষের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। রাজনীতি না করেও শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মানুষের ভাষা বুঝে জনগণের নেতা হয়েছিলেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ‘৭ নভেম্বরের মাধ্যমে সিপাহী-জনতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা—সবক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। বিগত সময়ে যারা শহিদ জিয়াকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করতে চায় তারাই এখন বিএনপির বড় ‘বন্ধু’ সাজার চেষ্টা করছে। কালচারাল ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় হুমকি। জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি—যে দলই হোক, কালচারালবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো. মাহবুবুর রহমান, লেখক ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল মান্নান, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জসিম উদ্দিন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিম।