কুবি: উদ্বোধনের ৭ বছর পরও নানা সংকটে জর্জরিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগার, নেই প্রশিক্ষক। নানা সরঞ্জাম সংকটের কারণে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে ব্যায়ামাগারটি। একাধিকবার স্থান পরিবর্তন হলেও সরঞ্জাম-ব্যবস্থাপনা ঘাটতি কাটেনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্মিথ মেশিন, মাল্টি-জিম, এক্সারসাইজ সাইকেল, ওয়েট বেঞ্চ, ট্রেডমিল, বারবেল, ওয়েট প্লেট, ডাম্বেল ও ওয়াটার কুলারের মধ্যে মাল্টি-জিম ও এক্সারসাইজ সাইকেল আংশিক, আর ট্রেডমিল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যন্ত্রপাতির বেশির ভাগই নষ্ট এবং অনেকগুলো এখন আর মেরামতযোগ্য নয়। এছাড়া ব্যায়ামাগারে রাবার ফ্লোরিং, সেফটি কলার, ডাম্বেল র্যাক, ইলেকট্রিক ট্রেডমিল, স্ট্যান্ডার্ড অলিম্পিক বারবেল ও বাউন্সিং ওয়েট প্লেটসহ প্রয়োজনীয় অনেক সরঞ্জামই নেই।
অন্যদিকে ব্যায়ামাগারের জন্য বরাদ্দ কক্ষটি ছোট হওয়ায় একই সময়ে চার-পাঁচজনের বেশি শিক্ষার্থী ব্যায়াম করতে পারছেন না। বিকল সরঞ্জামের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং আশপাশে জঙ্গল থাকায় মশা ও দুর্গন্ধের সমস্যাও রয়েছে।

সংকটে জর্জরিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগার। ছবি: সারাবাংলা
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জাফর হাবিব রাজা বলেন, ‘জিম এখন ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলায়। আগে এটি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দখলে ছিল বলে শুনেছি। বর্তমান জায়গাটি ছোট হওয়ায় একসঙ্গে তিন-চারজনের বেশি ব্যায়াম করতে পারে না। সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষকের অভাব ছাড়াও আশপাশে জঙ্গল আর মশার উপদ্রবও সমস্যা তৈরি করছে। সময় বাড়ানো ও জায়গা পরিবর্তন চান অধিকাংশ শিক্ষার্থী।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মেঘলা আক্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারে শিক্ষার্থীদের জন্য তেমন কোনো সুবিধা নেই, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য একেবারেই নেই। সরঞ্জাম কম হওয়ায় অনেকে জানেও না যে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। ট্রেইনারের ব্যবস্থাও নেই, তাই মেয়েদের জন্য আলাদা সেকশন ও সুবিধা থাকা উচিত।’
ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ নন্দী। তিনি বলেন, ‘জিম সকাল ৯টায় খোলা হয়, যা ক্লাসের সময়ের সঙ্গে মিলে যায় ফলে অনেকেই যেতে পারে না। ট্রেইনার না থাকায় অনেকে ভুলভাবে ব্যায়াম করছে, যা ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। তিনি পুরোনো সরঞ্জামের পরিবর্তে নতুন সরঞ্জাম, ট্রেইনার নিয়োগ এবং সময়সূচি সকাল ৬টা থেকে ১১টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণের দাবি জানান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিফ ফিজিশিয়ান ডা. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, ‘ব্যায়াম নিয়মিত ও সঠিক প্রক্রিয়ায় করা উচিত। অতিরিক্ত ওজন তোলা বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যায়াম করলে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে এমন রোগী পাওয়া গেছে, যারা অতিরিক্ত ওজন তোলার কারণে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তাই বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মেনে ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি।’
শারীরিক শিক্ষা দফতরের পরিচালক মনিরুল আলম বলেন, ‘যারা এখানে কাজ করেন, তাদের আমরা সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ওভারটাইম দিতে পারি। তাই বর্তমানে ব্যায়ামাগারের সময়সূচি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। সারাদিন তো ক্লাস থাকে না, তাই শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে ব্যায়াম করতে পারবে। আর ট্রেইনার নিয়োগের বিষয়টি প্রশাসনই দেখবে।’
এবিষয়ে উপাচার্য মো. হায়দার আলী বলেন, ‘বর্তমানে এখানে যে জিমনেসিয়াম রয়েছে সেটি অনেক ছোট। কিন্তু সামনে আমরা নতুন ক্যাম্পাসে যাব, সেখানে বড় জিমনেসিয়াম এবং সুইমিংপুল হচ্ছে। এতো বড় জিমনেসিয়াম হচ্ছে যা অনেক ইউনিভার্সিটিতেই নেই। নতুন ক্যাম্পাসে গেলে শিক্ষাথীদের ব্যায়ামগারের সমস্যার সমাধান হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারটি উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের পরপরই ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর দখলে চলে যায়। পরে ২০২১ সালের শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে ব্যায়ামাগারটি স্থানান্তর করে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলায় নেওয়া হয়।