Sunday 09 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছোট হয়ে আসছে শ্রমবাজার, জনশক্তি রফতানিতে ধসের শঙ্কা

অপূর্ব কুমার, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:১২ | আপডেট: ৯ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:১৪

বিদেশে বাংলাদেশি জনশক্তি রফতানি। ছবি কোলাজ: সারবাংলা

ঢাকা: অবৈধ অভিবাসন, মানবপাচার, আইন লঙ্ঘন ও দক্ষ কর্মীর অভাবে ধীরে ধীরেই কমছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। এমনকি ভরসার শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবেও তৈরি হচ্ছে নানা জটিলতা। আবার বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও ভিসা বন্ধসহ নানা কারণে বন্ধ হওয়া কয়েকটি শ্রমবাজার এখনো চালু হয়নি। ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের গণ্ডি। এতে জনশক্তি রফতানি খাতে ধস নামার আশঙ্কা করছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমবাজার নিয়ে গবেষণা করে নতুন বাজার চালু এবং পুরনো বাজার খুলতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স খাত।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার বলে পরিচিত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ওমান। এই চার দেশের মধ্যে সৌদি আরব ছাড়া বাকি তিনটি দেশে কর্মী পাঠানো সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরেরও বেশি সময়েও বাজার তিনটি চালু করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে চালু থাকলেও সৌদির শ্রমবাজারে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। পাসপোর্ট সত্যায়নসহ নানা নতুন শর্তের কারণে বর্তমানে ওই দেশেও শ্রমিক পাঠানোর হার কমেছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ইতিহাসে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক গেছেন। গত ২০০৪ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ২১ বছরে সৌদি আরবে মোট শ্রমিক গেছেন ৪৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৩ জন। যা মোট শ্রমবাজারের ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গেছেন ৩ লাখ ৪ জন, ২০২৪ সালে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন, ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন, ২০২২ সালে ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৪ জন, ২০২১ সালে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন ও ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬২৭ জন।

সৌদি আরবের পর গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২১ বছরে মোট শ্রমিক গেছেন মোট ২২ লাখ ০৭ হাজার ৯৯১ জন। যা শ্রমবাজারের শতকরা ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর মধ্য চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ মে মাস পর্যন্ত গেছেন ২ হাজার ৯৯৩ জন, ২০২৪ সালে ৪৭ হাজার ১১৬ জন, ২০২৩ সালে ৯৮ হাজার ৪২২জন, ২০২২ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৭৭৫জন, ২০২১ সালে ২৯ হাজার ২০২জন ও ২০২০ সালে ১ হাজার ৮২ জন।

তৃতীয় শ্রমবাজার ওমানে ২১ বছরে গেছেন ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ জন। যা মোট শ্রমবাজারের ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মাত্র ৪৩ জন। ২০২৪ সালে ৩৫৮ জন, ২০২৩ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩ জন, ২০২২ সালে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ জন, ২০২১ সালে ৫৫ হাজার ০৯ জন ও ২০২০ সালে ২১ হাজার ৭১ জন।

চতুর্থ বাজার মালয়েশিয়াতে ২১ বছরে গেছেন মোট ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৩ জন। যা মোট শ্রমবাজারের ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত মে পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার ৪৮৬ জন, ২০২৪ সালে ৯৩ হাজার ৬৩২, ২০২৩ সালে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৩ জন, ২০২২ সালে ৫০ হাজার ৯০ হাজার, ২০২১ সালে মাত্র ২৮ জন ও ২০২০ সালে ১২৫ জন।

২১ বছরে কাতারে গেছেন ৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৮১ জন। যা মোট জনশক্তির ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত গেছেন ৪০ হাজার ৩০৮ জন, ২০২৪ সালে ৭৪ হাজার ৪৪২ জন, ২০২৩ সালে ৫৬ হাজার ১৮৪ জন, ২০২২ সালে ২৪ হাজার ৪৪৭ জন, ২০২১ সালে ১১ হাজার ১৫৮ জন। আর ২০২০ সালে ৩৬০৮ জন।

২১ বছরে সিঙ্গাপুরে গেছেন ৯ লাখ ১৩ হাজার ১৫৯ জন। যা মোট শ্রমবাজারের ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত মে পর্যন্ত ২৬ হাজার ৩৮৯, ২০২৪ সালে ৫৬ হাজার ৮৭৮. ২০২৩ সালে ৫৩ হাজার ২৬৫, ২০২২ সালে ৬৪ হাজার ৩৮৩, ২০২১ সালে ২৭ হাজার ৮৭৫ ও ২০২০ সালে ১০ হাজার ৮৫ জন।

কুয়েতে ২১ বছরে গেছেন মোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৫ জন।যা মোট শ্রমবাজারের ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গেছেন মোট ১১ হাজার ১১ জন। ২০২৪ সালে ৩৩ হাজার ৩১ জন, ২০২৩ সাল গেছেন ৩৬ হাজার ৫৪ জন, ২০২২ সালে ২০ হাজার ৪২২ জন, ২০২১ সালে ১ হাজার ৮৮৪ জন ও ২০২০ সালে ১ হাজার ৭৪৪ জন জন কুয়েতে গেছেন।

বাহরাইনে ২১ বছরের গেছেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬১০ জন। এর মধ্যে গত দুই বছরে কোনো শ্রমিক যায়নি। এর আগে ২০২৩ সালে গেছে মাত্র একজন, ২০২২ সালে ১০ ও ২০২০ সালে মাত্র ১০ জন। অথচ সেখানে সার্বিক হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। এই হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বাহরাইনের দুয়ার প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে।

লেবাননে মোট শ্রমিক গেছেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ৭৭০ জন। যা মোট জনশক্তির ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গেছে মাত্র ২ হাজার ১৮১ জন। ২০২৪ সালে গেছেন ৪ হাজার ২২৫ জন, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০২২ সালে গেছেন ৮৫৮ জন, ২০২১ সালে ২৩৫ জন ও ২০২০ সালে ৪৮৮ জন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম সরাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমবাজার নিয়ে ভালো কিছু করবে। নতুন শ্রমবাজার চালু ও বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্তের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে তারা। কিন্তু এই জায়গাগুলোতে দৃশ্যমান কিছু হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমবাজারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমবাজারগুলো নিয়ে গবেষণা করাতে হবে। কোথায় নতুন বাজার খোলা যাবে এবং বন্ধ পুরনো বাজারগুলো কীভাবে খোলা যায়, তা নিয়ে গবেষণা জরুরি। সেইসঙ্গে জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে ওই দেশগুলোর শ্রমবাজার ফের উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। এখানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ জরুরি।’

সৌদিআরবে নানা জটিলতা বাড়ছে

সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় এবং ভরসার শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর মূল জনশক্তির ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কর্মী সৌদি আরবে যায়। তবে দেশটিতে বেশিসংখ্যক কর্মী গেলেও সেখানকার বাজারে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এই বাজারে কাজ করতে গেলে কর্মীদের সত্যায়নের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘তাকামুল’ হচ্ছে দক্ষতার পরীক্ষায় পাস করা সনদ। শুরুতে সাধারণ কর্মী কিংবা ক্লিনারদের জন্য এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল না। তবে বর্তমানে সব পেশার কর্মীকে এই পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষার জন্য কর্মীপ্রতি আলাদা ৫০ ডলার (বর্তমানে ছয় হাজার ১০০ টাকা) ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া পরীক্ষাটি দিতে কর্মীদের অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে নানা ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন কর্মী ও জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা।

তাদের মতে, সবধরনের কর্মীর জন্য এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না করে শুধুমাত্র যারা দক্ষ তাদের জন্য করা হোক। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি পুরোপুরি সৌদি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে তাদের করার কিছু নেই। তাকামুল সনদের পরীক্ষা ছাড়াও দেশটিতে যাওয়ার পর আকামা, চাকরি, বেতনসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ কর্মীদের। এতে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছে তাদের।

বন্ধ একটি বাজারও এখনো চালু হয়নি

বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমানসহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি শ্রমবাজার গত সরকারের আমলেই বন্ধ হয়ে যায়। একবছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত একটি শ্রমবাজারও চালু করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হলেও বাজার দু’টি চালু করা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ চালু হবে তাও নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। আবার দূতাবাস না থাকায় ইউরোপের শ্রমবাজারের সমস্যাও সহজে কাটছে না বলে জানিয়েছেন অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নতুন গন্তব্য জাপান সেলেও আসেনি সক্ষমতা

আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগাতে জাপান সেল গঠন করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত ২০ আগস্ট উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘জাপানে বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে জাপান সেল গঠন করা হয়েছে। আগে তিনটি খাতে দক্ষতার পরীক্ষা থাকলেও এখন তা পাঁচটি খাতে উন্নীত করা হয়েছে। জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও সনদ দেওয়ার জন্য পৃথক সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।’

তবে বিএমইটির তথ্য বলছে, গত ৯ মাসে মাত্র ৯৬২ জন কর্মী জাপানে গেছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জাপানে একজন কর্মীও পাঠাতে পারেনি ৬২ রিক্রুটিং এজেন্সি। এর ফলে গত ৩১ আগস্ট এই এজেন্সিগুলোর কাছে কর্মী পাঠাতে না পারার ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাছিনা বেগমের সই করা এক চিঠিতে এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

বর্তমানে জাপানে শ্রমিক পাঠানোর কাজে গতি ফেরাতে দেশটি সফর করছেন একটি প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া। সফরকালে জাপান ও বাংলাদেশের মানবসম্পদ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে জাপান প্রায় এক কোটি ১০ লাখ বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হবে, যেখানে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ কর্মক্ষম বয়সী মানুষের অতি-সরবরাহ রয়েছে। এটি সরবরাহ এবং চাহিদার মধ্যে একটি ভালো সমন্বয়।’

মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীরা রয়েছেন ধোঁয়াশায়

গতবছর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রথম ধাপে প্রায় আট হাজার জনকে বাছাই করেছে দেশটি। তবে নির্ধারিত সময় অর্থ্যাৎ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের পাঠানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, নিয়োগদাতা থেকে এখনো কোনো চাহিদাপত্র পাঠানো হয়নি। সরকার নতুন করে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো এজেন্সিগুলোকে মালয়েশিয়া শ্রমিক পাঠাতে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে।’

সম্প্রতি মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে যোগ্য হিসেবে নির্বাচন করা সাত হাজার ৮৬৯ জনকে নির্মাণ ও পর্যটন খাতে নেওয়া হবে। তারা যাবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে।

বোয়েসেল সূত্র জানায়, কর্মীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া তারা এরই মধ্যে শুরু করেছে। সবাইকে মোবাইল ফোনে বার্তা দেওয়া ও কল করা হয়েছে। আগ্রহীদের পাসপোর্টের কপি ও মালয়েশিয়ার নির্মাণশিল্প উন্নয়ন বোর্ডের (সিআইডিবি) নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে বোয়েসেলে ই-মেইল করতে বলা হয়েছে। সিআইডিবির প্রশিক্ষণ ও সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর মালয়েশিয়া যেতে কর্মী চূড়ান্ত করা হবে।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চাহিদাপত্র আনা, প্রশিক্ষণ-পরবর্তী সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ফ্লাইটসহ নানা প্রক্রিয়া আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভুয়া ওয়ার্ক পারমিটে সর্বনাশ

ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ব্যবহার করে ভিসা আবেদনের ফলে পূর্ব ইউরোপের দুই দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি ইউরোপের দেশ সার্বিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়ার ভিসা আবেদনে ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে দেশ দু’টির দূতাবাস। এরই মধ্যে তারা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া বন্ধ করেছে। এসব জালিয়াতি না থামালে ভিসা বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দূতাবাস।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, উত্তর মেসিডোনিয়ায় দূতাবাসে ভিসার আবেদন করা ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট ভুয়া। সার্বিয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। দুই মাস ধরে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোনো ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করছে না দেশ দু’টি। তবু নিয়মিত এসব ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ব্যবহার করে ভিসার আবেদন আসছে। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করা হবে।

সম্প্রতি উত্তর মেসিডোনিয়াতে বাংলাদেশি পাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। এর মধ্যে দু’জনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও একজনের সিলেটে। এ চক্রকে আটকের বিষয়টি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানে গ্রেফতার চক্রের সদস্যদের বিচার শেষে জেলে পাঠানো অথবা ডিপোর্ট (নিজ দেশে ফেরত পাঠানো) করার সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, উত্তর মেসিডোনিয়ার ও সার্বিয়ার ভুয়া ভিসা ও নকল স্টিকার বানিয়ে প্রতারণার ফলে, একদিকে কর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। যা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর