ঠাকুরগাঁও: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটি দল পলিটিক্স নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। সনদ সম্পর্কে একটি দল বলছে গণভোট হতে হবে নির্বাচনের আগে। আমরা বলছি গণভোট হলে নির্বাচনের দিন হতে হবে।’
তিনি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত জনতা এবং নেতার্কমীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা গণভোট, সনদ বুঝি? বুঝি না। কিছু লোক আসছে আর এটা আমাদের ঘাড়ের মধ্যে চাপাচ্ছে।’
রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত দৌলতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জগন্নাথপুর ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সংস্কার আমরা মেনে নিয়েছি। কিছু সংস্কার আছে পার্লামেন্টে গিয়ে ভোটাভোটি হবে, তর্কবিতর্ক হবে, তারপরে সেটা পাস হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোট আমাদের জন্য জরুরী, কেন? ১৫ বছরে আমরা ভোট দিতে পারিনি। এই ভোটের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার নির্বাচিত করবেন। পার্লামেন্ট গঠন করে দেশটাকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসবো। এই সরকার কৃষকের কষ্ট বুঝে না। ধানের দাম নেই, আলুর দাম নেই। আমরা সরকারে আসলে কৃষকদের ধান, আলু, গমের ন্যায্য মূল্য যেন পায় সে ব্যবস্থা করবো।’
তিনি বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার আমাদের, আমরা এই সরকারকে বসিয়েছি। আমরা সবাই মিলে এই দায়িত্ব দিয়েছি। দুঃখের কথা হচ্ছে এই সরকারে মানুষ নাই, মানুষের যে কষ্ট এই সরকার বুঝে না। কৃষকের সমস্যা কোথায় এই সরকার বুঝে না। আগে কৃষকের সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমাদের মা-বোনেরা সব থেকে বঞ্চিত, কোথাও গিয়ে কোনো সুরাহা পান না। এজন্য আমরা নারীদের ক্ষমতাসীন করার জন্য ফ্যামিলি কার্ডের ব্যবস্থা করবো।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ‘পালিয়ে যাওয়া’ প্রমাণ করেছে যে তার দলের কর্মী এবং দেশের জনগণের প্রতি তার বিন্দুমাত্রও দরদ ছিল না। তিনি কর্মীদের অসহায় অবস্থায় রেখে গিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই মাটিতেই আমাদের জন্ম, এই মাটিতেই আমরা থাকি, এখানেই সুখ-দুঃখের সঙ্গে বাঁচি এবং মরলে এই মাটিতেই মরবো। দেশের মাটি ছেড়ে কখনো যাবো না।’
ব্যক্তিগত ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি বহু কষ্ট করেছি। আপনারা জানেন যে, আমি ১১বার জেলে গিয়েছি। পুলিশ আমাকে সেই সেলে পাঁচ দিন আটক করে রেখেছিল, যেই সেলে মৃত্যুদন্ড আসামিদেরকে রাখা হয়। আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছি।’
তিনি তার দলের চেয়ারপারসন প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৬ বছর বিনা দোষে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আর আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে নির্বাচন উপস্থিত। এই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিবেন তো? এবার ভোট ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তো? সবাই ভোট দিতে পারবেন তো?’
কর্মীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবার মার্কা কয়টা? মার্কা একটা দেখতেছেন ধানের শীষ, নৌকাটা এবার দেখা যাচ্ছে না। আরেকটা দেখা যায় দাঁড়িপাল্লা। দাঁড়িপাল্লাও এবার ইলেকশন করবে। সুতরাং আপনাদের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা ও ধানের শীষের মধ্যে বেছে নিতে হবে প্রার্থী।’
দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও সাধারণ মানুষের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ধানে-আলুতে এবার মার খেয়েছে কৃষক। আলু হিমাগার থেকে আনতেছে না, তার মানে কৃষি কাজ করে লাভবান হতে পারছেন না।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘অর্ন্তবর্তী সরকার মানুষের কষ্ট বোঝে না। বিএনপি সরকারে এলে কৃষকদের এবং মা-বোনেদের সুবিধা দেওয়ার জন্য দুটি বিশেষ কার্ড চালু করা হবে। সব বাড়ির মায়েদের কাছে একটি করে কার্ড থাকবে। এই কার্ডের মাধ্যমে মায়েরা ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনতে পারবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। প্রতিটি কৃষকের কাছে এই কার্ড থাকবে। এর মাধ্যমে কৃষক ন্যায্যমূল্যে সার, কীটনাশক, সেচের পানি এবং তার ফসলের ন্যায্য বাজার করতে পারবেন।’
গণহত্যা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট জুলাইয়ে গণহত্যা হয়েছিল। ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও গণহত্যা হয়েছিল। এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য একটাই—তখন পশ্চিম হানাদার বাহিনী পাকিস্তানিরা আমাদের এখানকার কিছু লোকজনকে নিয়ে তারা এই গণহত্যা করেছিল আর এইবার শেখ হাসিনা তার প্রশাসনকে দিয়ে আমাদের ছেলেগুলোকে মেরেছে।’
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর লিটনসহ অনেকে।
এসময় জেলা, উপজেলা, থানা ও স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়, রায়পুর ইউনিয়নের ভাউলারহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও রাতে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।