Sunday 09 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিমের ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে উত্তাল নিয়ামতপুর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৮

নিয়ামতপুর থানার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সারাবাংলা

নওগাঁ: ‘আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই’-বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আর্তনাদ করছিলেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার তল্লা গ্রামের মিনহাজুল ইসলাম। তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে মমতা আক্তার মিম তল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী গত বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়।

দুই দিন পর শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে বিদ্যালয়ের পাশের একটি ডোবা থেকে তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, ডোবা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে অনুসন্ধান করে কলাগাছের নিচে লুকানো অবস্থায় মিমের মরদেহ পাওয়া যায়।

পুলিশ এ ঘটনায় তল্লা গ্রামের আসাদ আলী (৫৫), সোরাইন বাবু (৩০), ও শিমুল (২৮)-কে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় ফিরোজা বেগম নামে আরও এক আসামিকে নিয়ে গ্রেফতার আসামির সংখ্যা চারজনে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে নিয়ামতপুর থানার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশ নেন নিহত শিশুর বাবা মিনহাজুল ইসলাম, মা আশা আক্তার রুনা, স্থানীয় ইউপি সদস্য পারুল বেগম, চাচা আক্তার হোসেন, প্রতিবেশী মন্টু হোসেন, আজিজুল ইসলাম স্বপনসহ এলাকাবাসী।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মমতা শুধু একটি নাম নয়, সে এখন আমাদের প্রতিবাদের প্রতীক। খুনিদের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে দেশের কোনো মেয়েই নিরাপদ থাকবে না। স্থানীয়দের দাবি, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয় একটি পরিকল্পিত ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড।

বক্তারা বলেন, মমতা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে একদল দুর্বৃত্ত কৌশলে তাকে আটকায়। পরে তারা মমতাকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ বিদ্যালয়ের পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর কলাগাছ চাপা দিয়ে লুকিয়ে রাখে। দু’দিন পর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী সন্দেহ করে। লাঠি দিয়ে কলাগাছ সরালে মমতার দেহ পানির ওপর ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘মমতার হত্যার বিচার চাই’ এমন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো থানার সামনের এলাকা।

নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি নির্মম হত্যা। আমরা মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আশাকরি রিমান্ড মঞ্জুর হলে এবিষয়ে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এমসিসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র হাতে পেলে মামলাটির চার্জশিট দেওয়া হবে।’

তিনি আরও জানান, পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।

ঘটনার পর থেকেই তল্লা গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা বলছে ‘আমরা সবাই মিম হত্যার বিচার চাই। ওর মতো আর কোনো বন্ধুকে যেন এভাবে হারাতে না হয়।’

স্থানীয় শিক্ষক সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।’