টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার তরুণ ক্রিকেটার দেবাশীষ সরকারের স্বপ্ন একটাই—একদিন জাতীয় দলে খেলে দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামা। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি।
বগুড়ায় চলমান বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দেবাশীষ করেছেন লড়াকু ৫১ রান। তার এই ইনিংস দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দেবাশীষের জন্ম জেলার বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের ঝুনঝুনিয়া গ্রামে। বাবা আশিষ সরকার ও মা ময়না রানী—এক সাধারণ গ্রামীণ পরিবারের সন্তান হয়েও বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তীব্র ভালোবাসা থেকেই তার এই পথচলা শুরু।
২০১৬ সালে ফুলকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় দেবাশীষের। পরে পরিবারের অনুপ্রেরণায় টাঙ্গাইল শহরে এসে টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কোচ আরাফাত রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর একে একে জেলা অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৭ দলের অধিনায়কত্ব করেন।
দেবাশীষের পারফরম্যান্সে চোখ পড়ে জাতীয় নির্বাচকদেরও। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের অধিনায়ক হয়ে ভারত সফরে যান তিনি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল আঞ্চলিক দলের বিপক্ষে দুটি ম্যাচেই জয় পায়। ভারত সফরে টেস্ট ম্যাচে তিনি করেন হাফ সেঞ্চুরি, আর ওয়ানডেতে ৪৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন।
সম্প্রতি আরব আমিরাত ও শ্রীলঙ্কা সফরেও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স করেছেন এই তরুণ। মিরপুর ও রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ৩টি ওয়ানডের মধ্যে দুইটিতে খেলে ৯ উইকেট শিকার করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে গাজী টায়ার ক্লাবের হয়ে খেলছেন।
দেবাশীষের আদর্শ দেশে সাকিব আল হাসান, আর বিদেশে শচীন টেন্ডুলকার। তার ভাষায়, “আমি কঠোর পরিশ্রম করছি জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য। দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামার মুহূর্তটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
তার বাবা আশিষ সরকার বলেন, “অনেক কষ্ট আর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেবাশীষ আজ এই জায়গায় এসেছে। এখন সে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলছে—এটা আমাদের জন্য গর্বের। একদিন জাতীয় দলেও খেলবে, এটা আমার বিশ্বাস।”
টাঙ্গাইলের সাবেক ক্রিকেটার আবু নাসের মানিক বলেন, “দেবাশীষ মেধাবী ও পরিশ্রমী খেলোয়াড়। টাঙ্গাইল জেলার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা তার আছে।”
প্রাইম ধলেশ্বর ক্লাবের হেড কোচ ও টাঙ্গাইল স্পোর্টস একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা আরাফাত রহমান বলেন, “দেবাশীষ আমার সরাসরি ছাত্র। বয়সভিত্তিক সব দলে সে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে তার অংশগ্রহণ আমাদের গর্বিত করেছে। আমি নিশ্চিত, একদিন সে জাতীয় দলে খেলবে।”