ঢাকা: নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আমরা বিএনপি’র সাথে এখনো কোনো যৌথভাবে আসন ভাগাভাগি করিনি।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে শহীদ নূর হোসেন স্মরণে আলোচনা সভা ও নাগরিক ঐক্যে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শহীদ নূর হোসেন আমাদের কাছে আইকন। নূর হোসেন গণতন্ত্র মুক্তির জন্য জেনেশুনেই জীবন দিয়েছেন। ১০ নভেম্বর আমাদের উদ্দীপনার দিন। আজ নাগরিক ঐক্যে যে দু’জন যোগদান করেছেন, তারা নিজ গুণে গুণান্বিত। তাদের পেয়ে নাগরিক ঐক্য সামনের দিকে অগ্রসর হবে। আমরা মনোনয়নের ১৫২ জনের তালিকা করেছি, তার মধ্যে আজ যোগদানকৃত দুজনের নাম আছে।
তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আগামী নির্বাচন বিগত সময়ের নির্বাচন থেকে ব্যতিক্রম হবে। মানুষের পেটে আজ ভাত নেই, কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। এই দেশ যদি আমাকে বাঁচার মতো কিছু না দিতে পারে, তাহলে এই নির্বাচন দিয়ে আমি কী করব? ধনীরা ১ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিলে অধিকাংশ টাকা বিদেশে পাচার করে, অথচ গরিব মানুষকে লোন দিলে এক টাকাও পাচার হয় না—তাহলে লোন গরিবকে দেওয়াই ভালো। আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন দেশ চাই, যেখানে আমরা কষ্টের কথা বলতে পারব, আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। জনগণের কাছে একটাই দাবি—যে দলকে আপনার বিশ্বাস হবে তাকে ভোট দিন, কোনো মার্কা দেখে নেবেন না।
মান্না বলেন, দেশে বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এই সংকট বর্তমান সরকারই সৃষ্টি করেছে। আমরা দীর্ঘদিন বিএনপির সাথে ছিলাম, তাই বলে তাদের সমস্ত কার্যক্রমকেই আমরা সমর্থন করি না। সত্যকে সবার মেনে নিতে হবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করব আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন করতে।
নাগরিক ঐক্যে নতুন যোগদান করেন জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, স্বৈরাচারের পতন হলেও দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পায়নি। আজ থেকে ৩৮ বছর আগে শহীদ নূর হোসেন জীবন দিয়েছিলেন গণতন্ত্র মুক্তির জন্য, কিন্তু আমরা কি গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে পেরেছি? আমরা গণতন্ত্রের জন্য এখনো যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমরা যতদিন স্বাধীনভাবে কথা বলতে না পারব, আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরে না পাব, ততদিন সত্যিকারভাবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। এখনো দেশের জনগণ সত্য কথা বলতে পারে না—তাহলে আমাদের যুদ্ধ শেষ হয় কীভাবে?
তিনি বলেন, আজ আমরা নাগরিক ঐক্যে যোগদান করলাম দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে। আমরা মনে করি, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম নাগরিক ঐক্য। এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই আমরা দেশের জন্য কাজ করতে চাই। আমি চাকরি থেকে অবসরের আগে ও পরে কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সামাজিক বিভিন্ন কল্যাণকর কাজ করে আসছি। ২০০৮ সালে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করি এবং দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর জাতীয় পার্টির একজন কর্মী হিসেবে কাজ করলেও বারবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছি। ২০২৩ সালে জাতীয় পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় আমি দল থেকে পদত্যাগ করি। আমরা আশাবাদী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ নাগরিক ঐক্যের পাশে থাকবে, বিশেষ করে কুড়িগ্রামের মানুষ আমাদের পাশে থাকবেন। আমি যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো দল থেকে মনোনয়ন না পাই, তাহলে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করব, তবে আমি নাগরিক ঐক্য থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আব্দুস সালাম (নতুন যোগদান), নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন রাজা, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার এবং ব্যারিস্টার সোহরাব হোসেন (নতুন যোগদান)।