ঢাকা: রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আট দলের সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের জড়ো হবে বলে জানিয়েছেন পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আট দলের নেতারা।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
তিনি বলেন, ‘জনগণের পাঁচটি দাবি নিয়ে আমরা আটটি দল আন্দোলনে আছি। আমাদের দাবির পঞ্চম দফা আন্দোলন চলমান। কিন্তু সরকার এখনো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোটের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আগামীকাল আমাদের আট দলের সমাবেশ থেকে দেশ ও জাতি একটা নির্দেশনা পাবে। সরকারও এখান থেকে সঠিক মেসেজটা পাবে। সেজন্য আজকে আমরা আট দল মিলে সমাবেশের প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছি। প্রস্তুতির মধ্যে হলো- এখানে হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ হবে। পল্টন মোড়ের দক্ষিণ পাশে স্টেজ হবে। একদিকে প্রেস ক্লাব, নাইটিংগেল মোড় ও দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সমাবেশ হবে। সমাবেশ দুপুর দুইটায় শুরু হয়ে চারটায় শেষ হবে।’
হামিদুর রহমান বলেন, ‘রাজধানী কেন্দ্রীক এই সমাবেশে ঢাকা এবং আশেপাশের জনগণ অংশগ্রহণ করে। আমরা দেশ ভিত্তিক সমাবেশের ডাক দিতে পারতাম, কিন্তু সরকারকে বোঝাতে চাই রাজধানীর সমাবেশ দিয়ে যদি সরকার মেসেজ নিতে পারে, বুঝতে পারে, তাহলে আমরা মনে করি এই সমাবেশ থেকেই একটা মতামত উঠে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব সরকার আমাদের যে পাঁচ দফা দাবি সেটা মেনে নেবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার যে পদ্ধতি আমরা দেখেছি একটি আদেশ জারি করতে সংসদ থাকলে সংসদে পাস হয়, সংসদ না থাকলে আদেশ জারি হয়। ঐকমত্য কমিশন আদেশ জারির কথা বলেছে। সরকারের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা এনাফ ছিল। সেখানে দুই সপ্তাহের অধিক কালক্ষেপন করে ঝুলিয়ে রেখেছে।’
জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে আলোচনায় ডাকা হলেও তারা আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ওনাদের বলেছিলাম আপনারা ডাকেন আমরা আসবো, তাও ওনারা আসেনি। এখনো আলোচনার পথ খোলা আছে, ওনারা যেকোনো সময় বসতে চাইলে আমরা রাজি আছি।’
অফিস আদালত খোলার দিনে রাস্তার ওপরে সমাবেশে জনদুর্ভোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দুপুরে রিলাক্স সময়ে দিয়েছি। অফিস ছুটির আগে এবং লাঞ্চের পরে। দুইটায় শুরু হয়ে বিকেল চারটায় শেষ হয়ে যাবে। আশা করি জনদুর্ভোগ হবে না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনা ভেস্তে যায়নি। আলোচনার সাফল্য আছে। জুলাই সনদ রচিত হয়েছে, সইয়ের মাধ্যমে একটা দলিল রচিত হয়েছে। অনেকগুলো মতদ্বৈততা ছিল। আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সনদ হয়েছে। কিছু কিছু নোট অব ডিসেন্ট কেউ কেউ দিয়েছে সেটা ওখানে রেকর্ড আছে। এটা জুলাই সনদকে প্রভাবিত করে না। সংকটটা তৈরি হয়েছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে। এখানে ঐকমত্য কমিশনের অন্য দলকে সন্তষ্ট করার মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। ওনারা সুপারিশে বলতে পারতেন জুলাই সনদ জারি এবং গণভোট নির্বাচনের আলোকে পৃথকভাবে হবে। এখানে ফুলস্টপ করলে কিন্তু জটিলতা হয় না। ‘অথবা’ দিয়ে একটা রাস্তা খুলে দিলেন এখানে সংকটের তেরি হয়েছে।’
গণভোটের বিধান নাই এমন প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, ‘এই কথা যদি বলা হয় যে গণভোটের বিধান নাই, সেটা বিদ্যমান সংবিধানে নাই। পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে গণভোট ছিল। ফ্যাসিজমের আমলে যে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে সেটা নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। চূড়ান্ত রায় আসলে আমরা বুঝবো সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত এই প্রশ্ন যদি কোনো রাজনৈতিক দল তোলেন তাহলে তারা ফ্যাসিবাদের অবস্থানকে সমর্থন করেন। আমিও তাহলে একটা কথা বলতে পারি, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হওয়ার কথা। ২৬ সালে কি পাঁচ বছর পূর্তি হয়? এটা কি সংবিধানে আছে? সংবিধানের কথা বলে ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা জাতিকে বার বার বিপদে ফেলেছে। তাদের অপশাসন চাপিয়ে দিয়েছে। যারা এ ধরনের প্রশ্ন তোলেন সংবিধান সংবিধান। তাহলে সংবিধান বড় না জনগণের অভিপ্রায় বড়? জনগণের জন্য সংবিধান না সংবিধানের জন্য জনগণ? এ বক্তব্য আজকে আমি দিচ্ছি, আমাদের মাননীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব বহুবার দিয়েছেন।‘
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানি, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা তৌহিদুজ্জামান, অধ্যক্ষ মো. রোকনুজ্জামান রোকন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারি, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, নেজামে ইসলাম পার্টির অর্থ সচিব কাজী আনোয়ারুল করিম ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) জেনারেল সেক্রেটারি মো.কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।