চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাউজানের একসময়ের ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী ওরফে‘মেজর ইকবাল’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, একাধিক হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ইকবালের বিরুদ্ধে অন্তঃত ৪০টি মামলা আছে, যার মধ্যে ১১টির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া গেছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে রাউজান পৌরসভা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গ্রেফতার ইকবাল হোসেন চৌধুরী (৫২) রাউজান পৌরসভার সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিন দশক আগে থেকে মেজর ইকবাল বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এরমাঝে বিদেশে চলে গেলেও কয়েক বছর পর আবার দেশে ফিরে আসে। সম্প্রতি সে আবারও সক্রিয় হয়েছে। সে রাউজান থানার তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সক্রিয় ডাকাত দলের সদস্য। তার বিরুদ্ধে ৬টি হত্যাসহ মোট ১১টি মামলার তথ্য আমরা পেয়েছি। সে নিজেই জানিয়েছে, কমপক্ষে ৪০টি মামলা আছে তার বিরুদ্ধে।’
পুলিশ সূত্র ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, নব্বইয়ের দশকে রাউজান যখন ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ খ্যাত ছিল তখন ইকবালের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থান ঘটে। প্রথমে এনডিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে পুরো একটি বাহিনী পরিচালনা করতো। ১৯৯৬ সালের পর যোগ দেয় বিএনপিতে। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি পুলিশ রাউজানে এক গহীন পাহাড়ের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ইকবালকে গ্রেফতার করে। এরপর প্রায় ছয় বছর জেল খেটে ইকবাল ২০১০ সালে জামিনে মুক্তি পান।
এরপর দেশ ছেড়ে দুবাইয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রাউজানের আওয়ামী লীগ দলীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে ‘ম্যানেজ’ করেন। ফজলে করিমের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে ইকবাল ২০১৭ সালে দেশে ফেরেন। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা শুরু করেন। ফজলে করিমের আশীর্বাদ থাকায় তখন পুলিশও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতাকর্মীরা রাউজান থেকে পালিয়ে গেলেও ইকবাল আরও শক্ত অবস্থান নিয়ে থেকে যায়। অভিযোগ আছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইকবাল বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার আশ্রয় পান। কিন্তু গত এক বছরে রাউজানে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে একাধিক হত্যাকাণ্ডের পর সম্প্রতি পুলিশ সন্ত্রাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে ইকবালকেও গ্রেফতার হতে হয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, মেজর ইকবাল হিসেবে পরিচিত এ সন্ত্রাসী ও তার বাহিনীর হাতে ১৯৮৯ সালে খুন হন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও রাউজান কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মজিবুর রহমান। ১৯৯৩ সালে পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আকতার হোসেন রাজুকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় প্রধান আসামি ইকবাল। রাউজানের দুই ভাই টিটু ও মিঠুকে একসঙ্গে হত্যা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহার কান্তি বিশ্বাস হত্যা, ইকবাল ও জামিল নামে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে একসঙ্গে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি খুনের মামলায় ইকবাল আসামি হয়েছিলেন।