নীলফামারী: কৃষকের ছেলে হয়েও কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে বড় অর্জনের গল্প লিখেছেন নীলফামারীর মো. সোহেল রানা। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রকাশিত ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে শিক্ষা ক্যাডারের ইতিহাস বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে পিএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবারের বিশেষ বিসিএসে মোট ৬৬৮ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যেই সোহেল রানার এই অসাধারণ অর্জন এখন নীলফামারী জুড়ে আলোচনার বিষয়।
নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের কুখাপাড়া গ্রামের কৃষক আবু হোসেন ও গৃহিণী সাহিদা বেগমের চতুর্থ সন্তান সোহেল রানা ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন মনোযোগী। অর্থনৈতিক কষ্টকে সঙ্গী করেই তিনি এগিয়ে গেছেন এক ধাপ এক ধাপ করে।
সোহেল রানা ২০১৪ সালে সোনারায় সংগলশী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ এবং ২০১৬ সালে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ থেকে জিপিএ–৪.৯২ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৩.৫৪ নিয়ে স্নাতক এবং ২০২১ সালে একই বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৩.৫৬ নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
নিজের অনুভূতি জানিয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এই অর্জন শুধু আমার একার নয় এটি আমার বাবা-মা, শিক্ষক ও পরিবারের সকলের পরিশ্রমের ফল। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার। আমি বিশ্বাস করি, মনোযোগ, পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে গ্রাম থেকে উঠে এসেও বড় কিছু করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে কাজ করতে চাই, যাতে গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থীরাও নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।’
সন্তানের সাফল্যে গর্বিত বাবা আবু হোসেন বলেন, ‘আমি একজন কৃষক মানুষ। সারা জীবন জমিতে কাজ করেছি ছেলেদের মানুষ করার জন্য। আমাদের অবস্থা ভালো ছিল না, কিন্তু আমি কখনো ওর পড়াশোনায় বাধা দিইনি। আজ ও দেশের বড় পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে—এটা আমাদের পরিবারের গর্বের বিষয়। আমি বিশ্বাস করি, আমার ছেলে একদিন দেশের জন্য বড় কিছু করবে।’