ঢাকা: আপিল বিভাগের নির্দেশনা ও সরকারের নীতি উপেক্ষা করে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমতি দেয়ায় বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা)সহ ৮ সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ফিলিপ মরিসকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে ‘পাবলিক হেলথ ল-ইয়ার্স নেটওয়ার্ক’ (পিএইচএলএন)।
রোববার (১৬ নভেম্বর ) তামাক বিরোধী ব্যক্তিত্ব সাইফুদ্দীন আহমেদ, আর্থ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এর সিইও মো. আমিনুল ইসলাম ও প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল উদ্দীনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী পাবলিক হেলথ লইয়ার্স-র নেটওয়ার্ক-র সদস্য ব্যারিস্টার জুয়েল সরকার এ লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন।
যেসব প্রতিষ্ঠানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় সচিব, বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয় কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-এর চেয়ারম্যান ও ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ লিমিটেড।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ধূমপান ও তামাক ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা সর্বজন স্বীকৃত। ধূমপান ও তামাক ব্যবহার হতে জনগণকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে ক্ষতিকর নেশাদ্রব্য নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে। যা আদালতের নির্দেশনা, রাষ্ট্র ও সরকারের নীতির পরিপন্থি। এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত দরকার।
সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ সিভিল আপীল নং ২০৪-২০৫/২০০১ – এ গত ২০১৬ সালের ১ মার্চ এক রায়ে বাংলাদেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে ৬টি নির্দেশনা প্রদান করেছে। ওই রায়ের নির্দেশনা সমুহের মধ্যে অন্যতম – দেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের নতুন কোন কোম্পানি অনুমোদন বা লাইসেন্স প্রদান না করা এবং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলো তামাকজাত পন্য উৎপাদন বন্ধে অন্য শিল্পে পরিবর্তন হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের জনস্বাস্থ্যকর ভেষজ নিষিদ্ধকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় নিকোটিন পাউচের মতো ক্ষতিকর পণ্য, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পণ্যটিকে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হিসেবে অনুমোদন দেয়নি, সেখানে তা অনুমোদনের মাধ্যমে বেজা আদালতের নির্দেশনা ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। সরকারের উচিত এ অনুমোদনের সাথে জড়িতদের জবাবদিহীতার আওতায় আনা। অন্যথায় আইন, আদালত ও বিচারব্যবস্থার সম্মানহানী হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশে আরও বলা হয়েছে, গত ১৮ মে ২০২৫ তারিখে দেশে ই-সিগারেট জাতীয় যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনের কোন কারখানার স্থাপনের অনুমতি না প্রদানে বিডা ও বেজা-কে নির্দেশনা প্রদান করে সরকার। উপর্যুপরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা দেশের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে এক সাথে কাজ করার যৌথ ঘোষনায় স্বাক্ষর করেছে। সরকার বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাবে এ ধরনের নিকোটিন পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছে। অপরদিকে চিকিৎসকদের পরামর্শে নিকোটিন রিপ্রেসমেন্ট থেপারির জন্য ওষুধ অনুমোদন করেছে। এমতাবস্থায় বেজা কর্তৃক ফিলিপ মরিস-কে ক্ষতিকর নেশাদ্রব্য নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদনের ঘটনার সুষ্ট তদন্ত দরকার। একই সাথে আদালতের নির্দেশনা বিবেচনায় রেখে ফিলিপ মরিস-এর নিকোটিন উৎপাদনের কারখানা অনুমোদন বাতিল করা দরকার।
প্রসঙ্গত তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। দেশে অসংক্রামক রোগের কারণে ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয়। আর অসংক্রমাক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক ব্যবহার। তামাক ব্যবহার দেশে ফুসফুস ক্যান্সার এবং মুখের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ২০১৮ সালেই হয়েছে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এ বিশাল ক্ষতি হতে নাগরিকদের রক্ষায় আপীল বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালন জরুরি বলেও লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।