রংপুর: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রংপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধারা।
তারা দাবি করেছেন, পলাতক অপরাধীদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে, যাতে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত বৃথা না যায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই রায়কে ‘বিচারের প্রথম পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করলেও পূর্ণ ন্যায়বিচারের জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল ওই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পরে প্রসিকিউটররা ইন্টারপোলের মাধ্যমে পলাতক আসামিদের গ্রেফতার এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ, যার মৃত্যু গণঅভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে। তার সহযোদ্ধারা রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য এবং মামলার সাক্ষী রিমু মুরমু বলেন, ‘আবু সাঈদের রক্তের প্রতি এই রায় একটি উত্তর। আমরা সাক্ষ্য দিয়ে বিচারের পথ দেখিয়েছি, কিন্তু এখন সরকারের দায়িত্ব অপরাধীদের ফিরিয়ে আনা। দেরি হলে শহীদদের স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’
রিমু মুরমু মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, যা রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরেক সহযোদ্ধা আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘আমরা সন্তুষ্ট, কারণ আবু সাঈদের হত্যার নির্দেশকারীদের ফাঁসির রায় হয়েছে। কিন্তু পলাতকদের গ্রেফতার ছাড়া এটি অসম্পূর্ণ। সরকারকে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটি না হলে জুলাইয়ের অপরাধ বিচারহীন থেকে যাবে।’
তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশের মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ যা আবু সাঈদের মৃত্যুর কারণ হয়, তা রাজসাক্ষী মামুনের জবানবন্দিতে প্রমাণিত হয়েছে, যা তাদের সন্তুষ্টির কারণ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রংপুর শাখা, মহানগরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আন্দোলন করা সদস্যরা বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে দেড় হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতার হত্যা এবং ৩০ হাজারের বেশি আহতের ঘটনা ইতিহাসের কালো অধ্যায়। আবু সাঈদের মতো শহিদদের জন্য এই রায়ের বাস্তবায়ন দৃষ্টান্তমূলক হতে হবে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, রায় কার্যকর না করলে আন্দোলনের চেতনা আবার জেগে উঠবে।’
আবু সাঈদের হত্যার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সহযোদ্ধারা বলছেন, গত বছরের ১৬ জুলাই বেরোবি সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তার প্রকাশ্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল জ্বলে ওঠে, যা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়।