ঢাকা: ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন সার, এক কার্গো এলএনজি ও চাল আমদানিসহ ১৩টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৪ হাজার ৫৭৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া সভায় ইতোপূর্বে ক্রয় কমিটিতে অনুমোদিত দুটি প্রকল্পের পূর্ত কাজের চুক্তিমূল্য সংশোধন তথা ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড.সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, সভায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ১৭ হাজার ৫০ পিস ১২ বোর শটগান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিটি শটগানের দাম ধরা হয়েছে ১৪৬ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এতে মোট ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৬২ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
সভায় ইউরিয়া, ডিএপি ও টিএসপি সার আমদানির ৬টি পৃথক প্রস্তাবে মোট ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক সার ক্রয় করা হবে। এর মধ্যে বিএডিসি কর্তৃক রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় মরক্কো’র ‘ওসিপি নিউট্রিক্রপস’ থেকে ১৩তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার (প্রতি মেট্রিক টন ৫১৬ ডলার দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১৯০ কোটি ৯ লাখ টাকা); চীনের ‘বানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং লিমিটেড’ থেকে ৭ম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার (প্রতি মেট্রিক টন ৭১৩.৭৫ ডলার দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা); এবং সৌদি আরব-এর মা’এডেন থেকে ১১ ও ১২তম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন করে মোট ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার (প্রতি মেট্রিক টন ৭১৩ ডলার দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ৭০০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা) কেনা হবে।
অবশিষ্ট ৭০ হাজার মেট্রিক টন হচ্ছে ইউরিয়া সার। এর মধ্যে কাফকো থেকে ৯ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা (প্রতি মেট্রিক টন ৩৮৯ ডলার দরে) এবং সৌদি আরব-এর সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৯ম লটের আওতায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ১৯৪ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা (প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৬.৪১ ডলার দরে)।
বৈঠকে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি চলতি পঞ্জিকা বছরের ৪৯তম এলএনজি আমদানি। এটি সরবরাহ করবে ‘বিপি সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড’। প্রতি এমএমবিটিইউ ১১.৬৪ ডলার দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এতে ব্যয় হবে ৪৮৯ কোটি ৮৮ লাখ ১২ হাজার টাকা।
বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-০৫-এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুরের ‘মেসার্স আদিত্য বিড়লা গ্লোবাল ট্রেডিং (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড’ এ চাল সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন চাল ৩৫৪.১৯ ডলার দরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এতে ব্যয় হবে ২১৬ কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
অন্যান্যের মধ্যে বৈঠকে ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’র আওতায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ইউনিসেফ-এর মাধ্যমে ভ্যাকসিন ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪১৯ কোটি ৯৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
এছাড়া সিলেট-চারখাই-শেওলা হাইওয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে মূল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে কোরিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কেক্লেং কোম্পানি লিমিটেড।
ই-পাসপোর্ট ও প্রশিক্ষণে ব্যয় ১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর’ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ই-পাসপোর্ট বুকলেট ও প্রশিক্ষণ সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ কাজের জন্য মনোনীত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জার্মানির ‘ভেরিডোস জিএমবিএইচ’। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৯২ কোটি ৩২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
সিলেট ওসমানী বিমান বন্দর সম্প্রসারণে ব্যয় বাড়ছে ৬১৭ কোটি টাকা
সভায় ‘সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধন)’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ (বিইউসিজি)। প্রকল্পটির মূল চুক্তি ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ১১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় ৬১৭ কোটি ৮ লাখ টাকা বেড়ে মোট চুক্তিমূল্য দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এছাড়া দোহাজারি-রামু-গুনদুম রেল প্রকল্পের একটি প্যাকেজ কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ছে ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।