ঢাকা: আর্থিক সংকট নিরসনে মো. শান্তকে (১৬) হত্যা করে তার অটোরিকশা বিক্রির পরিকল্পনা করা হয়। এর পর দিয়াবাড়ি এলাকায় ঘুরতে নিয়ে রাতে কিশোর শান্তকে গলাকেটে তার অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। পরে সেই অটোরিকশা নেত্রকোনায় ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এ ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের ডিসি মুহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতার চার জন হলেন- সামিদুল হক মনা (৪২), রবিউল ইসলাম রানা (২০), হযরত আলী (৪৫) ও নয়ন মিয়া (৩০)। এর মধ্যে নয়নকে নেত্রকোনা থেকে এবং বাকি তিনজনকে রাজধানীর কাফরুল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিসি মুহিদুল বলেন, ‘সামিদুল ও রবিউল আর্থিক সংকটে থাকায় তারা টাকার খোঁজ করছিল। এক পর্যায়ে তারা শান্তকে (১৬) হত্যা করে তার অটোরিকশা নিয়ে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে। সামিদুল একজন চায়ের দোকানদার। হত্যাকাণ্ডের ত্রিশ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেফতার করেছে তুরাগ থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বিশেষ কায়দায় তৈরিকৃত নাইলনের রশি ও ভিকটিমের চালিত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘গত সোমবার বিকেল ৪টায় তুরাগ থানাধীন ১৭ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর ব্রিজের পূর্ব পাশে এইচ ব্লক রোড নং-৩/এ-এর একটি ফাঁকা জমির ছনের ভেতর গলাকাটা অবস্থায় অজ্ঞাত এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ৯৯৯-এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে নিখোঁজসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে জানা যায়, নিহত কিশোরের নাম মো. শান্ত (১৬)। তিনি গত ১৬ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিকশা চালাতে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি। এ সংক্রান্তে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। পরে নিহতের মামা মো. শহিদুল ইসলাম মরদেহটি তার ভাগ্নে মোঃ শান্ত বলে শনাক্ত করেন।’
মুহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে কাফরুল এলাকা থেকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সামিদুল হক মনাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. রবিউল ইসলাম রানা, হজরত আলি ও মো. নয়ন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘অটোরিকশা ছিনতাই করে বিক্রির উদ্দেশ্যে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে শান্তকে ৭ নম্বর ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কৌশলে ফাঁকা জমিতে নিয়ে গিয়ে রবিউল ইসলাম রানা নাইলনের রশি দিয়ে গলা চেপে ধরে এবং সামিদুল হক মনা ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে ভিকটিম শান্তকে হত্যা করে। পরে তারা অটোরিকশাটি নিয়ে ভাসানটেকের দিকে চলে যায় এবং হজরত আলি ও নয়ন মিয়ার সহায়তায় নেত্রকোনার দুর্গাপুরে নয়ন মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে আজ (১৯ নভেম্বর) নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয় এবং ক্রেতা মো. নয়ন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ও বিশেষ কায়দায় তৈরি নাইলনের রশি উদ্ধার করা হয়।’
এ ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।