Monday 24 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ স্ত্রী’র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:২৪

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত বাংলাদেশ কস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের তৃতীয় সচিব মো. ইউসুফ আলী – (ফাইল ছবি : কোলাজ ও সংগৃহীত)

ঢাকা: বিদেশে দায়িত্বপালনরত এক কূটনীতিকের বিরুদ্ধে আইন বর্হিভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনে শাস্তির আবেদন এবং সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনের দাবি জানিয়েছেন তার স্ত্রী। অভিযুক্ত কূটনীতিকের নাম মো. ইউসুফ আলী। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের তৃতীয় সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে নাম জড়ানো হয়েছে আরও একটি দেশের দূতাবাসে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তার।

জানা গেছে, দুই দেশে কর্মরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেআইনি সম্পর্ক নিয়ে মো. ইউসুফ আলীর স্ত্রী শিরিন আখতার গত ৩০ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুটি পৃথক অভিযোগ দাখিল করেন। আবেদন দুটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শিরিন আখতার গত ১ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন।

বিজ্ঞাপন

চিঠিতে বলা হয়েছে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত বাংলাদেশ কস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের তৃতীয় সচিব মো. ইউসুফ আলী এবং মালদ্বিপের মালেতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার আইন বর্হিভূত সম্পর্ক বিরাজমান। তাদের মধ্যে বেআইনি কর্মকাণ্ড চলমান থাকায় ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুসারে দুটি শাস্তির আবেদন করেছেন তৃতীয় সচিবের স্ত্রী। তবে ইউসূফ আলী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার স্ত্রী হতাশা থেকে এমন অভিযোগ করেছেন বলে তিনি দাবি করেনে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রশাসন বিভাগে পাঠানো চিঠিতে তৃতীয় সচিবের স্ত্রী শিরিন আখতার বলেন, তাদের ১৯৯১ সালে বিয়ে হয় এবং দুইটি সন্তান রয়েছে। বিগত ২০১৫ সালে ইতালি মিশনে কাজ করার সময় থেকে মো. ইউসুফ আলী (বর্তমানে ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের তৃতীয় সচিব) এবং বর্তমানে মালদ্বিপের মালেতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তার মধ্যে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তাদের কার্যস্থল ইস্তাম্বুল ও মালেতে পরিবর্তন হলেও তাদের বেআইনি, অনৈতিক এবং অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক থামেনি। এতে তৃতীয় সচিব মো. ইউসুফ আলীর স্ত্রী শিরিন আখতার প্রচণ্ড মানসিক চাপ, অপমানিত এবং সামাজিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।

অভিযোগপত্রে শিরিন আখতার অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে এই অনৈতিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করলেও অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা গালিগালাজ, হুমকি এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানি করেন। তৃতীয় সচিব মো. ইউসুফও শিরিন আখতারকে গালিগালাজ এবং আইনগত অধিকার তেকে বঞ্চিত করার হুমকি দেন। এমন অবস্থায় শিরিন আখতার তার অভিযোগ পত্রে তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুসারে শাস্তির প্রার্থনা করেন।

স্ত্রী শিরিন আখতার একইদিনে তাদের নাবালক সন্তানের অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক আরো একটি আবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেন। আবদনে শিরিন আখতার উল্রেখ করেন, মো. ইউসুফ আলীর সঙ্গে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর মো. ইউসুফ আলী তার নাবালক সন্তানের ভরন-পোষণ না দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে এবং বিনীতভাবে প্রার্থনা করছি যে আপনার সম্মানিত অফিস আমার নাবালক পুত্র আলফি আয়ান আলীর আইনগত অধিকার রক্ষা করতে দয়া করবেন। মোঃ ইউসুফ আলীর সকল আর্থিক সুবিধা, যার মধ্যে তার সঞ্চয়, পেনশন, ভবিষ্য তহবিল এবং অবসর-পরবর্তী সুবিধা অন্তর্ভুক্ত, তার একমাত্র মনোনীত হিসাবে তার নাবালক পুত্র আলফি আয়ান আলীর অবস্থান নিশ্চিত করুন এবং সুরক্ষিত করুন। এছাড়াও, মনোনীত ব্যক্তির মর্যাদার যে কোনও পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন রোধ করার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করুন যা আমার ছেলেকে তার ন্যায্য দাবি থেকে বেআইনিভাবে বঞ্চিত করতে না পারে।

এদিকে, গত ১ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরীতে (জিডি নং: ৬১) শিরিন আক্তার বলেন, ‘এই মর্মে আপনার থানায় হাজির হয়ে সাধারণ ডাইরী দায়ের করিতেছি যে, বিবাদী ১) প্রশাসনিক কর্মকর্তা (হিসাব), বাংলাদেশ হাই কমিশন, বর্তমানে বাংলাদেশ হাই কমিশন মালদ্বীপে কর্মরত, ২) মোঃ ইউসুফ আলী, পিতা- মোঃ ফজলুল হক, মাতা- মাহিয়া, সাং-শিবুত্তর, ডাকঘর- শেরপুর, থানা-শেরপুর সদর, জেলা- শেরপুর, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর কর্মকর্তা (তৃতীয় সচিব), বর্তমানে তুরস্কতে কর্মরত আছেন। আমার স্বামীর চাকুরির সুবাধে আমরা একই সাথে গত ২০২৪ সাল থেকে তুরস্ক বসবাস করি। উপরোক্ত ২নং বিবাদী আমার স্বামী ও ১নং বিবাদী আমার স্বামীর কলিগ, চাকুরীর সুবাদে দীর্ঘদিন যাবৎ একে-অপরের পরিচিত। আমার স্বামী একই অফিসে তার কলিগ ১নং বিবাদীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। উক্ত বিষয়টি আমি গত ৮ জুলাই সময় অনুমান ১৯:৩০ ঘটিকায় জানতে পেরে আমার স্বামীকে উক্ত অনৈতিক সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় সে আমার সাথে খারাপ আচরন করে। তার এহেন ও খারাপ আচরন আমি সহ্য করতে না পেরে গত ২১ জুলাই আমি আমার সন্তানসহ আমার বাবার বাড়ী মাতুয়াইল চলে আসি। বর্তমানে আমার স্বামীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা কোথাও জানালে আমার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে বিবাদীদ্বয়ের মোবাইল নাম্বার থেকে গত ১৫ আগস্ট হোয়াটস এ্যাপসসহ ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করিয়া আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করিতেছে। এমতাবস্থায়, উপরোক্ত বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডাইরীভুক্ত করিয়া রাখা একান্ত প্রয়োজন।’

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত বাংলাদেশ কস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের তৃতীয় সচিব মো. ইউসুফ আলী বলেন, তার স্ত্রী ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমন অভিযোগ করছেন। অভিযোগটির কোন ভিত্তি নেই। মূলত সন্দেহের বশে তিনি এমন আবেদন করেছেন। আমার স্ত্রী দ্রুত হতাশায় ভুগে থাকেন। যার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক কর্মস্থলে কাজ করার কারণে সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকতেই পারে। তবে সেটি অনৈতিক সম্পর্ক নয়।

তিনি আরও বলেন, আমি খুবই পারিবারিক একজন মানুষ। বড় সন্তানেরও প্রতি আমি স্বর্বস্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। তেমনি ছোট সন্তান এবং পরিবারের দায়িত্বও আমি পালন করে আসছি। তাদের প্রতি দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ সত্য নয়।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।