বগুড়া: বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের খলিশাকান্দি গ্রামে দুই শিশু সন্তানের গলাকাটা ও মায়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিবারের শয়ন ঘর থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে এলাকার প্রায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ভিড় করেন। হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতের স্বজনদের আহাজারি ও কান্নায় ভারি হয়ে শাজাহানপুর উপজেলা।
নিহতরা হলেন-মোছা. সাদিয়া মোস্তারিম (২৪), তার মেয়ে মোছা. সাইফা (৩) এবং ৮ মাস বয়সী ছেলে মো. সাইফ।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে শয়নকক্ষের বিছানায় দুই সন্তানের মরদেহ এবং ঘরের ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় সাদিয়া মোস্তারিমকে দেখতে পান তার স্বামী মো. শাহাদত হোসেন কাজল (৩০)। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বর্তমানে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত আছেন। কয়েকদিন আগে তিনি সাত দিনের ছুটিতে বাড়িতে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হঠাৎ মনোমালিন্য হওয়ায় স্বামী শাহাদত হোসেন পাশের রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। বর্তমানে মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় তিনি আছেন। তারা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে এদিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে মোস্তারিম বটি দিয়ে তার দুই সন্তানের গলা কেটে হত্যা করেন। পরে তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের তীরের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
সুমন নামের এক গ্রামবাসী জানান, সকালে রান্না শেষে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে নিহতের স্বামী কাজল ডাকাডাকি করেন। এসময় কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে তিনজনকে মৃত অবস্থায় দেখেন। স্থানীয়দের সহায়তায় লাশ নিচে নামিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়না তদন্তের জন্য বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
নিহত সাদিয়ার স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। স্বামী পাশের রুমে থাকা অবস্থায় কীভাবে মা নিজ সন্তানদের হত্যা করতে পারে? তারা সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
খলিশাকান্দি গ্রামের ইউপি (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। খবর পেয়ে আমরা বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করি।’
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, শয়নকক্ষে দুই সন্তানের রক্তাক্ত মৃতদেহ এবং ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা সাদিয়া মোস্তারিমের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনজনের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে এটি পরিকল্পিত হত্যা না আত্মহত্যা। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে হত্যার সঠিক কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পর স্বামী মো. শাহাদত হোসেন কাজল অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তিনি পুলিশ হেফাজতে হাতপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।