পটুয়াখালী: বাউফলে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গকন্যা’ গানকে ঘিরে ইউএনও আমিনুল ইসলাম ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ‘বঙ্গকন্যা’ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করে গাওয়া) গানটির সঙ্গে এক শিক্ষার্থী নৃত্য পরিবেশন করছেন। বাউফল উপজেলার নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলামসহ উপস্থিতরা তা উপভোগ করছেন।
এসময় কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা গানটির রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। পরে গানটির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আমরা তো খেয়াল করলাম না কিছু।’ প্রতিবাদের কারনে হঠাৎ রাগান্বিত ভঙ্গিতে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এজন্য উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন না, আপনারা সরকারি অনুষ্ঠানে বাধা দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভুলটা যেহেতু হয়েছে, তখন বিতর্ক তৈরি করার কী আছে।’ এরপরেই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা আরও বারতে থাকে।
উপস্থিত স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে স্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য বা দলীয় প্রশংসামূলক গান পরিবেশন করা একেবারেই অনুপযুক্ত। একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ফ্যাসিস্টদের দলীয় গান বাজানো শুধু নিয়মভঙ্গই নয়, বরং সরকারি নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলে। এমন গান অনুমোদনের আগে আয়োজকদের আরও সচেতন থাকা উচিত ছিল। অনুষ্ঠানের মতো জনসমাবেশে পক্ষপাতমূলক বা বিতর্ক সৃষ্টিকারী বিষয় যুক্ত হলে তা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে ইউএনও আমিনুল ইসলামের বদলির সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তার বিদায়ের খবরে উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদ ও পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাউফল পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন।
মিষ্টি বিতরণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী মুনতাসীর তাসরিপ লামিম বলেন, ইউএনও আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনওর নেতৃত্বে হামলা হয়। ওইদিন সংবাদ সম্মেলন ঠেকাতে তিনি প্রায় দুই শতাধিক আনসার সদস্য ও স্থানীয় সন্ত্রাসী ব্যবহার করেন, যা শিক্ষার্থীদের বিস্মিত করেছিলো। এসব কারণেই ইউএনওর বিদায়ে তারা আনন্দ প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
এ ছাড়া ইউএনও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে হামলার নির্দেশ, অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পাওয়া এক সাংবাদিককে জেলে ভরার হুমকি, সাংবাদিকদের ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে নিজ অর্থায়নে সাজানো স্লোগানে মিছিল বের করা, সরকারি খাস জমির রাজস্ব কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, সহকর্মী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও অবাধ্য আচরণ, শিক্ষার্থীদের রোদে দাঁড় করিয়ে নিজের স্ত্রীর জন্য ফুলেল সংবর্ধনার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেনের ভাগ্নি জামাই হওয়ায় প্রশাসনের ভেতরে বিশেষ প্রভাব খাটাতে পারেন।
এবিষয়ে ইউএনও আমিনুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ‘বঙ্গকন্যা’ গানটি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করে গাওয়া হয়েছে। গানটির গীতিকার হোসনে আরা জলি এবং সুরকারও তিনি নিজেই। গানটি প্রকাশিত হয়েছিল শিল্পীর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে।