চট্টগ্রাম ব্যুরো: নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বক্তব্যের পর ভাইরাল হওয়া আরেকটি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী, যিনি দুই দফায় সংসদ সদস্য ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের। এতে শাহজাহান চৌধুরীকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলতে শোনা যায়, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে রাজনৈতিক পাটাপার্টি ন গইরজ্যু। আঁর নাম শাহজাহান চৌধুরী। আঁই এক্কানা কিছু কিছু ফুনির। বোতজনে নাকি ইক্যা উল্টাপাল্টা…হবরদার, হবরদার, হবরদার, আঁই শাহজাহান চৌধুরী। আঁরে যারা ন চিনে ইতারা এহনও পর্যন্ত মেডির তলে বসবাস গরের।’ (আল্লাহর ওয়াস্তে রাজনৈতিক দলাদলি করবেন না। আমার নাম শাহজাহান চৌধুরী। আমি একটু কিছু কিছু শুনছি। অনেকে নাকি এদিকে উলটাপালটা…খবরদার, খবরদার, খবরদার আমি শাহজাহান চৌধুরী। আমাকে যারা চিনে না, তারা এখনো মাটির নিচে বসবাস করে।’
একই বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘আঁরলাই আল্লাহ আছে, আল্লাহ আছে, আল্লাহ আছে। আল্লাহর মেহেরবানি, আঁরলাই সূর্য থিয়াই থাইবু। আল্লাহ তাআলা আঁরে এন্ডল্যা মাইনষর এককান মর্যাদা দিইয়্যে। অনরা দোয়া গরিবেন।’ (আমার জন্য আল্লাহ আছে, আল্লাহ আছে, আল্লাহ আছে। আল্লাহর মেহেরবানি, সূর্য আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ তাআলা আমাকে এরকম মানুষের মর্যাদা দিয়েছেন। আপনারা দোয়া করবেন।)
শাহজাহান চৌধুরীর এই বক্তব্য গতকাল (বুধবার) রাত থেকে ভাইরাল হলেও তিনি কবে এ বক্তব্য দিয়েছেন সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকায় জনসংযোগের সময় শাহজাহান চৌধুরী এ বক্তব্য দিয়েছিলেন।
চট্টগ্রামে আলোচনা আছে, নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বক্তব্যের কারণে শাহজাহান চৌধুরী দলীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে তার মনোনয়নও জামায়াত বাতিল করতে পারে, এমন আলোচনাও শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন সময় এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তিনি আবারও তুমুল আলোচনায় এলেন।
শাহজাহান চৌধুরী বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ছিলেন। গত জুনে তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এক-এগারো পরবর্তী জরুরি অবস্থায় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। এরপর দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। সেই নির্বাচনে জামায়াত নেতা আ ন ম শামসুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালেও জামায়াতে ইসলামী ওই আসনে শামসুলকে মনোনয়ন দেয়।
আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে শাহজাহান চৌধুরী দফায় দফায় কারাভোগ করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন তিনি।
গত শনিবার (২২ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান চট্টগ্রাম সফরে আসেন। সেদিন নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘নির্বাচনি দায়িত্বশীল সম্মেলনে’ বক্তব্য দিয়ে শাহজাহান চৌধুরী তুমুল আলোচনা-সমালোচনা তৈরি করেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়…যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে। পুলিশকে আপনার পিছনে পিছনে হাঁটতে হবে।’
এ বক্তব্যের পর গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) শাহজাহান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয় জামায়াতে ইসলামী। সাতদিনের মধ্যে তাকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সই করা নোটিশে এ কথা বলা হয়।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শাহজাহান চৌধুরীর মোবাইলে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।