লালমনিরহাট: লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের চিরাচরিত জনদুর্ভোগ লাঘবে এক অনন্য মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে লালমনিরহাট জেলা যুবদল। প্রায় ১০ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের যাতায়াত সমস্যা সমাধানে সংগঠনটি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ও স্বেচ্ছাশ্রমে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের ছিঁড়া মধুরাম এলাকায় স্বতি নদীর উপর নির্মিত এই ভাসমান সেতুটির শুভ উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। উদ্বোধনের পরপরই তার সহধর্মিনীকে নিয়ে সেতুটির উপর হেঁটে সেতুটি পরিদর্শন করেন।
উদ্বোধন শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘রাজপুর ইউনিয়নের এই স্বতি নদীটি দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছিল। যাতায়াতের সীমাহীন দুর্ভোগ এই জনপদের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছিল। বিষয়টি অনুধাবন করে লালমনিরহাট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনিছুর রহমান আনিছের নেতৃত্বে যুবদলের সকল নেতৃবৃন্দ শ্রম ও মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নিজ উদ্যোগে এই ভাসমান সেতুটি নির্মাণ করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ৮০ মিটার দীর্ঘ ভাসমান সেতু নির্মাণের ফলে এখন এলাকাবাসীকে আর ৮-১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে বাজারে যেতে হবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কষ্ট দূর হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভাসমান সেতুটির নকশা অত্যন্ত আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব। এটি প্রচলিত সেতুর মতো জলস্তরের ওঠানামায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বর্ষাকালে নদীর জল যতই বাড়ুক না কেন, সেতুটি পানির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপরে ভেসে উঠবে, ফলে এটি কখনোই ডুববে না। এর অর্থ হলো, রাজপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষের যাতায়াত বছরজুড়ে, বিশেষত বর্ষার দুর্যোগপূর্ণ সময়েও থাকবে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সেতু শুধু একটি কাঠামোগত সমাধান নয়, এটি দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও যোগাযোগের এক মজবুত সেতুবন্ধন তৈরি করল।’
এর আগে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ভিপি আনিছ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের তথা বিএনপির প্রধান অঙ্গীকার। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস যদি এলাকাবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে পারে, তবেই আমাদের শ্রম সার্থক।’ তিনি এই মহৎ কাজে সহযোগিতা করার জন্য যুবদলের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
ভিপি আনিছ আরও বলেন, ‘এটি কেবল একটি সাময়িক সমাধান নয়, এটি একটি টেকসই ইঞ্জিনিয়ারিং দৃষ্টান্ত। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভেসে ওঠার এই ক্ষমতা নিশ্চিত করে যে, বর্ষার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার দীর্ঘদিনের যে দুর্ভোগ ছিল, তার চিরতরে অবসান হলো। স্কুলগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-সবার জন্যই এটি জীবনযাত্রার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং অতিরিক্ত পথ ঘুরে যাওয়ার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি লায়লা হাবিব, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক, সায়েদুল ইসলাম পাটোয়ারী সাজু, পৌর বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আব্দুস ছালাম, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব হাসান আলী প্রমুখ।