রাজবাড়ী: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতির কারণে রাজবাড়ীতে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ব্যাহত হয়েছে। জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে রাজবাড়ী সরকারি টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এলে সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। সকালে শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করে পরীক্ষা বর্জন কথা বললে অভিভাবকরা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়।
জানা গেছে, সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে রোববার থেকে শুরু হয়েছে সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি। তারই অংশ হিসেবে রাজবাড়ী টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইটি শাখার শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করে। কিন্তু আজ থেকে স্কুলে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে পরীক্ষা দিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ে। অনেকে বাড়ি ফিরে গেলে অভিভাবকরা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, ওসি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকতারা এসে অভিভাবকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে মক্তব স্কুলের প্রথম শাখায় নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর ও দ্বিতীয় শাখায় দেড় ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু হয়।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘আজকে বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সকালে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসলে শিক্ষকরা তাদের কর্মবিরতির কথা জানিয়ে পরীক্ষা বর্জন করার কথা বলে। শিক্ষকরা তাদের স্বার্থের জন্য আন্দোলনে নেমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আমরা শিক্ষকদের এমন আন্দোলন চাই না। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা হবে না ভেবে বাড়ি চলে গিয়েছে, এখন তাদের কি হবে?
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। পরে ডিসি স্যার, ইউএনওসহ আমরা এসে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।’
টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জুন কক্স বলেন, ‘আমাদের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। আমরাও তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছি। কিন্তু বাচ্চাদের এখন বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দেশনা পেয়েছি পরীক্ষা নিতে হবে। এক্ষেত্রে যদি সহকারী শিক্ষকরা সহযোগিতা না করেন তবে অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা নেওয়া হবে। তারই অংশ হিসেবে আমি স্কুলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু পরে সহকারী শিক্ষকদের অব্যবস্থাপনার দেখে আমি কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরে ডিসি স্যার, ইউএনও স্যার, ডিপিও স্যার এসে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।‘
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা হবে না জেনে বাড়ি চলে গেছে তাদের বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা কর্মবিরতি শুরু করে। কিন্তু আজ থেকে বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। আমরা এসে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’