ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডায় গৃহবধূ যানরুহামা আক্তার রিমুর মৃত্যু চার মাস পরও কাটেনি রহস্যের ঘোর। পরিবার বলছে আত্মহত্যা, আর মা নাজমা বেগমের দাবি—এটি পরিকল্পিত হত্যা। মৃত্যুর ৪ মাস পর কবর থেকে লাশ উত্তোলনের ঘটনায় আবারও প্রশ্নের মুখে রিমুর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।
গত ৭ জুন বাড্ডার শ্বশুরবাড়িতে রহস্যজনকভাবে মারা যান দুই সন্তানের জননী রিমু। প্রথমে এটি আত্মহত্যা বলে জানালেও, রিমুর মা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন—তার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
মেয়ের মৃত্যুর দিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাজমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামাই আমার বাসায় এসে খাওয়াদাওয়া করল। খাওয়ার পর হাত মুছতে মুছতে হঠাৎ বলল—‘ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে মারা গেল? সে বলল রিমু। কিন্তু ওই সময় তার ফোনেও কোনো কল আসেনি। তখনই আমার সন্দেহ হয়।’
তার অভিযোগ, ‘মেয়েকে নির্যাতন করে মাইরা ওরা ঝুলাইয়া রাখছে। মেয়ে গায়ে মারের দাগ আছিল। চুল কাটা ছিল, হাতেও কাটা দাগ ছিল।’
মৃত্যুর ১৬ দিন পর (২৩ জুন) রিমুর মা বাড্ডা থানায় জামাই আব্দুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে গত ১২ অক্টোবর পূর্ব বরকতপুর কবরস্থান থেকে রিমুর লাশ উত্তোলন করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আছিফ উদ্দীনের উপস্থিতিতে নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক ফাতেমা সিদ্দীকা সোমা জানান, ‘তদন্ত চলছে। এখনই হত্যার অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে কিছু বলা যাবে।’
অন্যদিকে রিমুর স্বামী আব্দুর রহমান দাবি করেন, স্ত্রী পরকীয়াজনিত কারণে ঈদুল আজহার দিন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘দাফনের সময় রিমুর মা উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনিই এখন অভিযোগ করেছেন।’
তবে রিমুর মা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘ওরা আমাকে পুলিশে জানাতে দেয় নাই। উল্টো বলে—সবাইকে বলব, মেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। না হলে আমার ক্ষতি হবে। পরে জানতে পারি, মেয়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আমার মেয়ে সাজগোজ করতে ভালোবাসত, কিন্তু ওদের পরিবার এসব পছন্দ করতো না। সন্দেহ আর নির্যাতনের কারণেই ওকে হত্যা করা হয়েছে।’
নিহত রিমুর দুই সন্তান—৬ বছরের আনাছ এবং ৩ বছরের আমাতুন—এখন শ্বশুরবাড়িতে আছে। রিমুর মা অভিযোগ করছেন, নাতি-নাতনিদের তাকে দেখতে দেওয়া হয় না। ‘বাচ্চাগুলা মাইরের জন্য কান্দে। মা ছাড়া ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে, আমি শঙ্কায় আছি,’—যোগ করেন তিনি।
উপ-পরিদর্শক ফাতেমা সিদ্দীকা সোমা আরও বলেন, ‘লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’