ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার জন্য শান্তি আলোচনায় কিয়েভের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিত করা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, আঞ্চলিক প্রশ্নটি সবচেয়ে কঠিন, কারণ রাশিয়া এখনো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের যেসব এলাকা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে, যা কিয়েভ কখনোই করবে না বলে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এই মন্তব্য করেন। এই বৈঠকে তিনি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, পোল্যান্ড এবং ইতালির মতো ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও একটি টেলি-আহ্বানে যোগ দেন।
এদিকে, ইউক্রেনীয় এবং মার্কিন আলোচকরা ফ্লোরিডায় দুই দিনের বৈঠক শেষ করেছেন। তারা একটি শান্তি পরিকল্পনা সংশোধনের কাজ করছেন, যা প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার পক্ষে ঝোঁকা বলে মনে করা হয়েছিল।
সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট আলোচনা সম্পর্কে ইতিবাচক সুর দিয়ে বলেছেন যে প্রশাসন যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তি পৌঁছানো নিয়ে খুবই আশাবাদী।
তবে জেলেনস্কি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, আলোচনাটি ‘খুবই গঠনমূলক’ হলেও ‘কিছু কঠিন বিষয় রয়েছে যা এখনও নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে মস্কো রওনা হয়েছেন। ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারও তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, উইটকফ জেলেনস্কি, ম্যাক্রোঁ, ইউক্রেনের প্রধান আলোচক রুস্তেম উমেরভ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে আলোচনার ফল পুতিনকে জানাবেন।
গত সপ্তাহে পুতিন বলেছিলেন, আমেরিকানরা একটি খসড়া শান্তি পরিকল্পনা রাশিয়ার কাছে দেখিয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে যুদ্ধ শেষ করার চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।
নভেম্বরে প্রচারিত প্রাথমিক মার্কিন-রাশিয়া খসড়া শান্তি পরিকল্পনা কিয়েভ এবং ইউরোপ জুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। মস্কোর দাবিগুলোর প্রতি ব্যাপকভাবে ঝোঁকার পাশাপাশি, এটি ইউরোপীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে রক্ষিত কয়েক বিলিয়ন ডলারের জব্দকৃত রুশ সম্পদ কীভাবে বিনিয়োগ করা হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে কিয়েভের প্রবেশাধিকারের শর্তাবলীও নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
ম্যাক্রোঁ অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে ‘কোনো চূড়ান্ত শান্তি পরিকল্পনা নেই’ এবং এমন কোনো প্রস্তাব কেবল ইউক্রেন এবং ইউরোপের ইনপুট নিয়েই তৈরি করা যেতে পারে।
ইউরোপীয় নেতারা এই শান্তি পরিকল্পনাটি ফাঁস হওয়ার পর থেকে আলোচনা টেবিলে একটি আসন পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং ভবিষ্যতে যেকোনো চুক্তি তৈরির প্রক্রিয়ায় তাদের যুক্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন।
ম্যাক্রোঁ ট্রাম্প প্রশাসনের সংঘাত বন্ধ করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও বলেন, আঞ্চলিক প্রশ্নটি “কেবলমাত্র প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চূড়ান্ত করতে পারেন” এবং জব্দকৃত রুশ সম্পদ, নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং ইইউতে যোগদানের বিষয়গুলোতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে অবশ্যই জড়িত থাকতে হবে।’
তিনি পুতিনের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বলেন, ‘‘তারা কি লড়াই বন্ধ করে শান্তি স্থাপন করতে প্রস্তুত? আমি বলতে চাই যে তিন, চার বার রাশিয়ানরা ‘না’ বলেছে। তাই তাদের কোনো তাড়া আছে বলে মনে হয় না।”
যদিও আঞ্চলিক প্রশ্নটি প্রধান বাধা, তবে কিয়েভের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়টিও বিতর্কিত প্রমাণিত হয়েছে।
কিয়েভ এবং তার ইউরোপীয় অংশীদাররা ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি (যেমন ন্যাটো সদস্যপদ) পেতে আগ্রহী, যা এটিকে পুনরায় আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু রাশিয়া এর ঘোর বিরোধিতা করছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইউক্রেনকে এই সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিতে রাজি নন।
আলোচনা টেবিল থেকে দূরে, যুদ্ধ চলছেই। সোমবার সকালে পূর্ব ইউক্রেনীয় শহর দিনিপ্রোতে একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।