রংপুর: রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জোরালো আন্দোলন শুরু করেছেন। দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এর আগে, রোববার কলেজ প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (কাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন। তবে সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এদিকে নির্বাচন না হলেও প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করে তহবিলে প্রায় ৩ কোটি টাকা জমা হয়েছে, যা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে বলে কলেজ সূত্র জানিয়েছে।
উত্তরবঙ্গের এই প্রাণকেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন। ১৯৯০ সালে শেষবারের মতো কাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর থেকে কোনো নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যার ফলে শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, এই ফাঁকির কারণে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা সীমিত হয়ে পড়েছে এবং ক্যাম্পাসে অশান্তির ছায়া পড়েছে।
কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদের নামে ফি নেওয়া হয়, কিন্তু সেই টাকা তহবিলে অলস হয়ে পড়ে আছে। আমরা চাই অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক, যাতে আমাদের অধিকার রক্ষা হয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মতো কোনো বিকল্প নেই। এটি নেতৃত্বের বিকাশের মূল প্ল্যাটফর্ম।’
কাকসু বাস্তবায়নে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও এ দাবির পক্ষে সক্রিয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক জিন্নাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কোনো প্রতিনিধি নেই। এটি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কলেজে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।’
ছাত্রদলের কলেজ শাখার সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
এ ছাড়া, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কলেজ শাখার সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘কাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে।’ সংগঠনটি সেপ্টেম্বর মাসে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছিল।