রংপুর: দেশের স্থিতিশীলতা ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত সমমনা ৮ দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এর আগে দলগুলো আলাদা দিনে গণভোটের দাবিতে কঠোর অবস্থান নিলেও এখন তারা পিছু হটেছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে বুধবারের (৩ ডিসেম্বর) বিভাগীয় গণসমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘জুলাই সনদের সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে জনগণের বৈধতা দেওয়ার জন্য গণভোট অত্যন্ত জরুরি। আমরা আগে আলাদা দিনে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা ও সার্বিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোটে আমরা রাজি হয়েছি। জনগণ নিশ্চিতভাবে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবে—এ ব্যাপারে আমরা পূর্ণ আশাবাদী।”
আব্দুল হালিম বলেন, আগামীকাল বুধবার রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠেয় বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঐতিহাসিক করার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। তিনি দাবি করেন, কয়েক লাখ মানুষের সমাগমে এই সমাবেশ জাতির সামনে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে শক্তিশালী বার্তা দেবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই)। সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ও বক্তা হিসেবে থাকবেন জামায়াতের নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম (রংপুর-২ প্রার্থী), ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল আশরাফ আলী আকন্দ, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাগপা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
জাতীয় পার্টির (জাপা) কঠোর সমালোচনা করে আব্দুল হালিম বলেন, ‘জাতীয় পার্টির তোষামোদী ভূমিকার কারণেই শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে জনমতকে ব্যর্থ করেছে। একসময় রংপুরসহ দেশের মানুষের সহানুভূতি ছিল জাপার প্রতি। কিন্তু হাসিনার প্রতি অন্ধ সমর্থন দিয়ে তারা জনগণের আস্থা পুরোপুরি হারিয়েছে। এখন সাধারণ মানুষের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে—আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে আব্দুল হালিম বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে দেশবাসী তার জন্য দোয়া করছে—এটাই জাতিগত ঐক্য ও সৌহার্দ্যের প্রতীক। আমরা এমন সম্পর্ক চাই, যেখানে সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার অবদান তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর-৪ আসনের জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক এটিএম আযম খান, রংপুর-১ প্রার্থী অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, রংপুর-৩ (ইসলামী আন্দোলন) প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালসহ ৮ দলের রংপুর পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।