রংপুর: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘‘ক্ষমতাপ্রেমীদের বারবারের ক্ষমতা লাভ সত্ত্বেও দেশকে তারা কেবল ‘পুরান বউ নতুন শাড়িতে’ উপহার দিয়েছে। এই ধরনের ধোঁকাবাজি আর চলবে না। বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ এবং দেশ রক্ষার জন্য তারা রাজপথে নামছে।‘’
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আট দলের জোটের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করিম বলেন, ‘ক্ষমতাপ্রেমীরা বারবার ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু কী উপহার দিয়েছে? তারা শুধু নতুনভাবে পুরান বউ নতুন শাড়িতে উপহার দিয়েছে। তাই নতুন শাড়িতে পুরান বউ উপহার দিয়ে আর ধোঁকা দিতে পারবেন না। ধোঁকা দেওয়ার দিন শেষ। বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ।’
তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে শুধু ক্ষমতা বদলের জন্য নয়। বরং যারা বিদেশীদের তাবেদারি-প্রভুত্ব কায়েম করেছিল, তাদের উৎখাতের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য তারা জীবন দিয়েছিল।’
তিনি ক্ষমতালোভীদের সতর্ক করে বলেন, ‘আপনারা মনে করছিলেন ওয়ান-টুর মধ্যে ক্ষমতায় যাবেন। সেই দিন ভুলে যান। যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা মানবতাপ্রেমিক, তারা আজ রাজপথে নেমে এসেছে।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘৫৩ বছর স্বাধীনতার পর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দুঃখজনক ইতিহাস লিখবে। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে দেশকে ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পর স্বপ্ন দেখেছিলাম, দেশ সংস্কারের মাধ্যমে দেশের দুর্নীতি রোধ হবে। কিন্তু দেশের সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচারের ব্যবস্থা না করেই এক শ্রেণির ক্ষমতালোভীরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু পাগল নয়, ডাবল পাগল হয়েছে।’
তিনি শহিদ আবু সাঈদের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আবু সাঈদ যেভাবে দুই হাত প্রসারিত করে দেশকে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে রক্ষা করেছে, তা ওই চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। দেশের টাকা বাইরে পাচারের জন্য নয়। তাই ক্ষমতালোভীদের বলতে চাই, ক্ষমতা ও দাপট দেখিয়ে এবং কালো টাকার মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন ভুলে যান। সেই দিন আর নেই। জনগণ এবার তাদের ‘না’ বলে দেশ থেকে তাদের উৎখাত করবে, ইনশাআল্লাহ।’’
তিনি জনগণের অপেক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে, কবে নির্বাচনের বাক্স আসবে। ইসলামের পক্ষে ও মানবতার পক্ষের জনগণ ভোট বাক্স ভরে দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’
সমাবেশে মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম। তারা সবাই পাঁচ দফা দাবির উপর জোর দিয়ে ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
এর আগে সমাবেশের শুরুতে রংপুর মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি নুরুল হুদা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর মহানগর সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল, জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর আমির এটিএম আজম খান, জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলার আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানীসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। তারা জুলাই অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে জোটের ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে ইসলামী শাসনের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।