Thursday 04 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ওসিগিরির খায়েশ আমার নেই’— সিলেটের বিতর্কিত ওসি আহাদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০০ | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০২

বিতর্কিত ওসি আব্দুল আহাদ। ছবি: সারাবাংলা

সিলেট: জেলার বিতর্কিত  ওসি আব্দুল আহাদের পুনরায় পদায়ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ঠিক সেই সময়ই ব্যক্তিগত জীবনের নানা অধ্যায়, কর্মজীবনের বাঁকবদল, মায়ের অসুস্থতা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক লটারিভিত্তিক পোস্টিং—সব কিছুর ব্যাখ্যা দিয়ে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ওসি আহাদ স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন—‘ওসিগিরির খায়েশ আমাকে কখনোই চেপে বসেনি। বরং বাধ্যবাধকতাতেই দায়িত্ব পালন করেছি।’ তার এই বক্তব্য ঘিরেই এখন নতুন আলোচনা।

সাম্প্রতিক লটারিভিত্তিক ওসি পদায়ন, ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন বাস্তবতা, পুলিশি দায়িত্ব, মাদকবিরোধী অভিযান-সবকিছু একসঙ্গে তুলে ধরে তিনি এই আবেগঘন স্টাটাস দেন।

বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত নিউজের ফটোকার্ড

প্রকাশিত নিউজের ফটোকার্ড

আরও পড়ুন: সিলেটে আবারও বিতর্কিত ওসি আহাদ, পদায়ন ঠেকাতে প্রতিবাদের ঝড়

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লিখেন, ২০০২ সালে পুলিশ একাডেমিতে মেরিট তালিকার শীর্ষে থাকার কারণে পছন্দসই জেলায় কাজ করার সুযোগ পেলেও তিনি নিজ জেলা এড়িয়ে অন্য জেলায় যোগদান করেন। এরপর দীর্ঘ সময় সিডি, পিবিআই, ও বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করেন।

নিজের মাকে নিয়ে আবেগঘন স্মৃতিও শেয়ার করেন তিনি জানান, ২০১০ সালে প্যারালাইজড হওয়া মা তার কর্মস্থলে থাকতেন। কিন্তু ২০১৭–২০২১ সালে ওসি’র দায়িত্ব পালন করার সময় পরিবারকে থানায় রাখতে গিয়ে মাকে গ্রামে পাঠাতে বাধ্য হন। মা তখন বলেন, ‘তোর ওসিগিরি শেষ হবে না, আর তোর কাছে আমার যাওয়া হবে না।’

পোস্টিং বিতর্কে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘লটারিতে ওসি পদায়নের তালিকায় আমি অভাগাও রয়েছি। ওই তালিকায় পূর্বের কর্মস্থলের নাম দেখে সিনিয়রদের জানিয়েছি—এটি আমার জন্য বিব্রতকর। লিখিত আদেশ এখনো হাতে পাইনি।’

তিনি আরও লেখেন, সচরাচর একই থানায় পুনরায় পদায়নের সুযোগ থাকে না, তাই তার ইচ্ছা বা ‘ওসিগিরির খায়েশ’ কথাটি অবান্তর।

হেরোইন উদ্ধার ও ফাঁসি রায়ের প্রসঙ্গ এক কেজি হেরোইন আটক ও পরবর্তী রায় নিয়ে যে সমালোচনা চলছে, সেখানেও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন আহাদ।

তার দাবি—‘ওসি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু তদন্ত করেছে সিআইডি, আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে রায় দিয়েছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কিছুই করার নেই।’

একইসঙ্গে তিনি সমালোচকদের ‘প্রপাগান্ডা’ ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন। বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকলে ব্যক্তিকে আক্রমণ করেন। একজনকে ভাইরাল করে পুরো বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা রাষ্ট্রের ক্ষতি।’

মাদকবিরোধী অভিযানে নিজের অর্জনও তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, সুনামগঞ্জে দায়িত্ব পালনের এক মাসে ৬০ কেজি গাঁজা ও ২৩৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়—যা জেলা ইতিহাসে বিরল।

স্ট্যাটাসের শেষ অংশে তিনি লেখেন, ‘আমাকে বিব্রত করতে পারেন, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু আমাকে কেন্দ্র করে যেন আর কেউ বিব্রত না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার এই অসুস্থ মানসিকতার চর্চা দেখেই ফেসবুকে থাকতে আর ভালো লাগে না।’

ওসি আহাদের এই স্ট্যাটাস ঘিরে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ তার অভিজ্ঞতা ও ব্যাখ্যাকে মানবিক বলে প্রশংসা করছেন, আবার কেউ দেখছেন—বিতর্কের মুখে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর বা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা।

উল্লেখ্য, সিলেটে বিতর্কিতভাবে ওসি আহাদের পুনরায় পদায়ন নিয়ে সমালোচনা চলছিলই। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর সারাবাংলায় ‘সিলেটে বিতর্কিত ওসি আহাদ, পদায়ন ঠেকাতে প্রতিবাদের ঝড়’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। ঠিক সেই উত্তাপের মাঝেই আজ নিজের ফেসবুক পেজে দীর্ঘ আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি, যেখানে স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন—‘ওসিগিরির খায়েশ আমার নেই।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর