টাঙ্গাইল: আবহাওয়া চাষের অনুকূলে থাকায় এ বছর টাঙ্গাইলে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে এখন খুশির ঝিলিক। এর ফলে ভালো দামের প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।
অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই জেলার চাষিরা আমন ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে এই ধান কেটে ঘরে তুলছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৬৩ শতাংশ জমিতে ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলেছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ। তাই নতুন ধান ঘরে তোলার নানা কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত এখন কৃষক ও কৃষাণীরা।
সরেজমিন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠেজুড়ে এখন চলছে আমন ধান কাটার উৎসব। কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আধুনিক যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন) ব্যবহার করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ভালো খড় পেতে প্রায় ৮০-৮৫ ভাগ কৃষক হাতে ধান কেটে মাড়াই করছেন। কৃষকের উঠানে ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে নতুন ধান। ব্যস্ত সময়ের মাঝে কৃষাণীরাও দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর। সরকারি প্রণোদনা ও কৃষকদের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ দেওয়ায় এ বছর ১ লাখ ৪ হাজার ৫৮৩ হেক্টর রোপা আমনের আবাদ হয়েছে।
এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদরে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৪ শত হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ৪ শত ৫ হেক্টরে, বাসাইলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ শত ৯০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৩ শত ৯২ হেক্টরে, কালিহাতিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ হাজার ৩০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৪ শত ৬৫ হেক্টরে, ঘাটাইলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৪০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৪ শত ৯০ হেক্টরে, নাগরপুরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৫ শত ১০ হেক্টরে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ২শত ১ হেক্টর, মির্জাপুরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ৮শত ৫০ হেক্টরে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৮ শত ৪৮ হেক্টর, মধুপুরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১৩ হাজার ২ হেক্টরে, ভুয়াপুরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ হাজার ২ শত ৩০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ১ শত ৫ হেক্টরে, গোপালপুরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৯শত হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টরে, সখিপুরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ২ শত ৬০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১৭ হাজার ২ শত ৬৫ হেক্টরে, দেলদুয়ারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৪ শত ৩০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৪ শত ৬০ হেক্টরে এবং ধনবাড়ীতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৯ শত ৬০ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৯ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টরে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বিঘা প্রতি তারা ১৪-১৬ মণ হারে ধান ঘরে তুলতেন। এ বছর তা বেড়ে ১৮-২০ মণ হারে ধান পাচ্ছেন। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
তারা আরও জানিয়েছেন, বাজারে ধানের দাম বেশি পেলে তারা এই মৌসুমে লাভের মুখ দেখবেন। আর বাজার যদি কম থাকে তবে ফসল উৎপাদনের ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে ফেলবেন। এদিকে এই মৌসুমে ধান কেটে দৈনিক পারিশ্রমিকে খুশি দিনমজুররা।
সহদেবপুর ইউনিয়ন দিগর গ্রামের কৃষক আবু বক্কর বলেন, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ধানে চিটা হওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে। তারপরেও আশা করছি ১৮/২০ মন ধান পাওয়া যাবে।
আরেক কৃষক আব্দুর জব্বার জানান, এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে সে সময়ে ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় তাদের ধানে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ক্ষেতের ধানগুলো জমিতে নেতিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে অনেক ধানের চিটাও হয়েছে। তবে সার, বীজ, কীটনাশকে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তাতে নতুন ধান বিক্রি করে আশা করি লাভবান হতে পারব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ জানান, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষে প্রশিক্ষণসহ প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা এবং বীজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার ফলে এবার রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলায় প্রায় ৬৩ শতাংশ জমির রোপা আমর ধান কেটে ঘরে তুলেছে কৃষক। এরই মধ্যে ৬২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে চলছে মাড়াইয়ের কাজও। জেলার এ বছর হাইব্রিড ও উফশী জাতের আমনের চারা রোপণ করা হয়েছিল। স্থানীয় জাতের আমনের চাষও হয়েছে কিছু এলাকায়। রোগবালাই কম থাকায় সব জাতেরই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ ধান কাটা শেষ হবে।