১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর। এ দিন মিত্রবাহিনী ঢাকার আকাশ পুরোপুরি দখলে নেয়। এতে বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে তৈরি হয় বিতর্ক। মার্কিন সরকারের বিশেষ উদ্যোগে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। এতে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র বুশের চেষ্টায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়।
ভেটো প্রয়োগের আগে সোভিয়েত প্রতিনিধি কমরেড মালিক বলেন, ‘পাকিস্তান সামরিক জান্তার নিষ্ঠুর কার্যকলাপের ফলই পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্ভব হয়ছে।’ মূলত এ দিন থেকে বাংলাদেশ প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল লড়াই শুরু হয় দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।
আর বাংলাদেশ সম্পর্কিত তৃতীয় প্রস্তাবটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে বেলজিয়াম, ইতালি ও জাপান। এদিন জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘কোনো শর্ত ছাড়াই পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এই উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী জাতির উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন।
এ দিন উত্তরবঙ্গের পীরগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পচাগড়, বোদা, ফুলবাড়ী, বীরগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ মুক্ত হয়। আর জীবননগর, দর্শনা ও কোটচাঁদপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে।
এর আগে ৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১টায় বিমান হামলা শুরু করে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিমানবাহিনী। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিত্র বিমানবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৩০ বার হানা দেয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সিলেট সেক্টরে বোমাবর্ষণ করে শত্রুর পাঁচটি বাংকার উড়িয়ে দেয়।
এ দিন জামালপুর বিমান হামলায় হানাদার বাহিনীর কয়েকশ’ সৈন্য নিহত হয়। চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনী ও যৌথ নৌবাহিনীর মধ্যে মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। বখশীগঞ্জে যৌথবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।