রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানান। দুই নেতা করমর্দন, আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর তারা একই গাড়িতে বিমানবন্দর ছাড়েন।
রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক জানিয়েছে, পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানিয়ে মোদি প্রটোকল ভেঙেছেন এবং এই আচরণ রুশ পক্ষকে বিস্মিত করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, মোদির এই পদক্ষেপ সম্পর্কে রাশিয়াকে আগে জানানো হয়নি। ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপিও এক্সে পোস্ট করে জানিয়েছে, নিয়মের বাইরে গিয়ে মোদি নিজেই বিমানবন্দরে পুতিনকে বরণ করেছেন।
দুই দিনব্যাপী ভারত সফরে পুতিন দশম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবেন। আজ রাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকারি বাসভবনে দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত ডিনার অনুষ্ঠিত হবে। ডিনার সম্পর্কে অফিশিয়াল তথ্য প্রকাশ না হলেও এটি ঘনিষ্ঠ আলোচনার পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো ভারতে সফরে এলেন পুতিন। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মস্কোয় গিয়ে বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমান সময়টি দুই দেশের জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জের। পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন চাপের মুখে আছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ও রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে নানা নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে ভারতের জন্যও বছরটি কঠিন যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পুতিন দিল্লি সফরে এসেছেন বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু হবে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তার। বর্তমানে ভারত ও রাশিয়ার বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত রপ্তানি বাড়াতে চাইছে—বিশেষত সামুদ্রিক পণ্য, আলু, ডালিম, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভোক্তাসামগ্রী ও ওষুধ খাতে।
এনডিটিভি ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, শুক্রবার সকালে পুতিন মহাত্মা গান্ধীর সমাধি ও স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটে যাবেন। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আরও রয়েছে নয়াদিল্লিতে রাশিয়ার গণমাধ্যম ‘আরটি ইন্ডিয়া’র উদ্বোধন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজে অংশগ্রহণ।
শুক্রবার প্রায় রাত ৯টার দিকে পুতিনের ভারত ত্যাগ করার কথা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটাই পুতিনের প্রথম ভারত সফর। স্বাস্থ্য, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশই বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি ও বাণিজ্য বাড়ানোর উপায় খুঁজছে। ক্ষুদ্র মডুলার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরও সম্ভাব্য ক্ষেত্র। পুতিনের সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আবারও নতুন গতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া সামলেই ভারতে এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে।