ঢাকা: টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রের এক সদস্য নাদিমকে (৩২) গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীতে নিজ বাসা থেকে নাদিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দক্ষিণকান্দির গোভিন্দপুরে।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে অচেনা নম্বর থেকে একটি বার্তা আসে। বার্তা প্রেরণকারী নিজেকে ‘নাজনীন’ নামে পরিচয় দিয়ে বলেন যে তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম আপওয়ার্ক-এর প্রতিনিধি। বাসায় বসে পার্ট টাইম কাজের মাধ্যমে আয় করার প্রলোভন দেখালে ভুক্তভোগী প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। প্রথমে ইউটিউব সাবস্ক্রিপশনসহ কয়েকটি ছোট অনলাইন টাস্ক করিয়ে ভুক্তভোগীর বিকাশ নাম্বারে প্রথমে ১৫০ টাকা এবং পরে ২,১০০ টাকা প্রদান করে। এরপর তাকে @upworkfrontdesk2013 নামক একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করা হয়। যেখানে ভুয়া সদস্যরা অভিনয় করছিলেন যে, তারা নিয়মিত কাজ করে বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তী ধাপে বড় টাস্কের কথা বলে প্রতারকরা ‘ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্ট’ খুলতে দুই হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে বলে। এরপর জানানো হয় আরও তিন হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে তার ব্যালেন্স সাত হাজার টাকা হবে এবং তিনি অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। অর্থ পাঠানোর পর তাকে ‘VIP-TASK GROUP’-এ যুক্ত করা হয়, যার এডমিন ছিল ‘হামজা’ (প্রোফাইল নাম)। গ্রুপে দেখানো হয় যে সবার ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্টে সাত হাজার টাকা জমা রয়েছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অর্থ উত্তোলন করতে চাইলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে জানানো হয়, ক্যাশ আউটের জন্য আরও ১৫ হাজার ৮০০ টাকা দিতে হবে। তিনি অর্থ প্রেরণ করেন। তবে ব্যালেন্স প্রদর্শনে অসঙ্গতি দেখা দিলে তিনি বিষয়টি জানতে চাইলে নতুন টাস্ক ও নতুন শর্ত আরোপ করা হয়। এভাবে একের পর এক টাস্ক, বড় লাভের লোভ এবং ভুয়া হিসাব দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী লালবাগ থানায় গত ২১ মে মামলা দায়ের করে। মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের পর সিআইডির সিপিসি ইউনিট প্রতারক চক্রের সদস্য নাদিমকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, এনআইডিসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়। সিআইডি এই চক্রের অন্যান্য অজ্ঞাত সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, প্রতারণার ফাঁদ এড়িয়ে চলার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি সিআইডির পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছে, অনলাইনে সহজভাবে বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে বিশ্বাস করবেন না। যেকোনো লেনদেনের আগে উৎস ও পরিচয় যাচাই করুন। প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে জানান। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন ০১৩২০০১০১৪৬, ০১৩২০০১০১৪৭, ০১৩২০০১০১৪৮ সিআইডির মোবাইল নম্বরে।