ঢাকা: পুশইনের শিকার বহুল আলোচিত ভারতীয় অন্তঃসত্ত্বা নারী সোনালী ও তার ছেলে সাব্বিরকে (৮) ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে সাড়ে ৭টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপিতে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের নিকট হস্তান্তর করা হয়। বিজিবির মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত ২৫ জুন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৬ জন ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করে। পুশইনের পর ওই ভারতীয় নাগরিকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করে এবং গত ২২ আগস্ট আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ছিলেন ও তার নাবালক শিশু সন্তান ছিল। মানবিক বিবেচনায় আদালত গত ২ ডিসেম্বর তাদেরকে স্থানীয় জিম্মায় দেন এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দেন।
লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও দুই শিশুকে পুশইন করায় সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দফতর কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে। উভয় দেশের সম্মতিতে ভারতীয় নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ তাদেরকে সসম্মানে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলো।
হস্তান্তর শেষে মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিএসএফের অমানবিক পুশইন আচরণের বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে। বিজিবি আশা করে, পুশইনসহ এ ধরনের অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইন-বিরোধী কার্যক্রম বিএসএফ বন্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে সীমান্তে সৌহার্দ্যপূর্ণ, মানবিক ও আইনসম্মত প্রক্রিয়া বজায় রাখবে।