Saturday 06 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেনাপোল বন্দর
২ মাস ধরে আটকা সুপারিবাহী ১৫০ ট্রাক, দৈনিক লোকসান ৩ লাখ টাকা

লোকাল করেসপন্ডেন্ট
৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৫১ | আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৫৩

বেনাপোল বন্দরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের সুপারির রফতানি আটকা। ছবি: সংগৃহীত

বেনাপোল: দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে আছে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক রফতানিমুখী সুপারির ট্রাক। দীর্ঘ এই অচলাবস্থার কারণে রফতানিকারকদের প্রতিদিন ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা হিসেবে প্রায় ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের মান নির্ণয় ও কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টির ফলেই এই রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

বিশ্বে সুপারি উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এবং গুণগত মানের কারণে ভারতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারি ভারতে রফতানি হয়। তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের সুপারি আমদানিতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ। এমন রমরমা বাণিজ্যের মধ্যেই দেড় শতাধিক সুপারির ট্রাক প্রায় দুই মাস ধরে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিন বন্দরে আটকে থাকায় পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাক চালকদেরও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আটকে থাকা সুপারি বহনকারী ট্রাক চালক মমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১ মাস ২৭ দিন ধরে এখানে আটকে থেকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওপারের ব্যবসায়ীরা সুপারির বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট করে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ট্রাক দেরিতে নিচ্ছেন বলে আমাদের সন্দেহ।’

রফতানিকারক পণ্য ছাড়কারী প্রতিষ্ঠান আউলিয়া এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে পরীক্ষাসহ নানা কারণ দেখিয়ে তারা পণ্য নিতে দেরি করছে। আমরা দ্রুত এই পণ্য খালাসের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত সরকার রফতানি বাণিজ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও নানা শর্ত আরোপের ফলে বর্তমানে রপ্তানির পরিমাণ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর। এ অবস্থা কাটাতে দ্রুত দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কাঠের আসবাবপত্র, ফলের জুসসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সড়ক পথে রফতানি বন্ধ রয়েছে।

তবে বন্দর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এই সংকটের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বেনাপোল বন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আবু তালহা জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ১০ হাজার ৬৫০ টন সুপারি রপ্তানি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে সমস্যার কারণে বন্দরে সে সব ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে শুনেছি, সেটা ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যে সব ট্রাকের কাগজপত্র আমাদের কাছে আসছে, সেগুলো ভারতে ঢুকছে।’

তিনি আরও জানান, যেসব সুপারির ট্রাকের কাগজ হাতে পেলে দ্রুত ছাড়করণে সহযোগিতা করা হবে। তবে রফতানিকারকেরা বলছেন, এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে দ্রুত সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়।