১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। যৌথবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী। তারা বুঝে যায়, তাদের পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ দিন রাত ১০টায় আকাশবাণী থেকে বাংলাদেশ দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান ভারতের সেনাধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশ। হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় এ আহ্বান জানানো হয়।
তিনি বলেন, ‘তোমাদের বাঁচার পথ নেই। বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য যৌথবাহিনী তোমাদের ঘিরে ফেলেছে। তোমরা যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছ, তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মুক্তিবাহিনী। দেরি হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করো তোমরা।’
অপরদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতির কথা জানিয়ে জেনারেল নিয়াজি গোপন বার্তা পাঠান রাওয়ালপিন্ডি সদর দফতরে। বার্তায় উল্লেখ করেন, সৈন্যরা দিনাজপুর, বিভিন্ন জায়গায় প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। গত ১৭ দিনে যেসব খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে, তাতে জনবল ও সম্পদের বিচারে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। অস্ত্রসহ পালিয়ে যাওয়া রাজাকারদের সংখ্যা বাড়ছে। ট্যাংক, ভারি কামান ও বিমান না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। এমন বার্তা পেয়ে পাকিস্তানি সেনাসদর দফতর সম্মুখ সমরের সৈন্যদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট যৌথবাহিনী চারদিক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পালাবার কোনো পথ নেই। হানাদার বাহিনীকে হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, না হয় মৃত্যু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি। এখানে ৯ মাসই প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছে। সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াও যৌথবাহিনী অবরুদ্ধ করে রাখে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি যৌথবাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ হয়ে আছে, যেকোনো সময় পতন। সিলেট মুক্ত, সেখানে বিমানবন্দরে মিত্রবাহিনীর হেলিকপ্টার বিনা বাধায় অবতরণ করেছে। লালমনিরহাটও মুক্ত হয়েছে।
এদিকে, রণাঙ্গণে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে দেশাত্মবোধক ও যুদ্ধের গান বাজতে থাকে।
এদিন জাতিসংঘের কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আসা কয়েকটি বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করতে না পেরে হংকং ফিরে যায়।