ঢাকা: বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাতে রাজি না হলে কিছুই করার নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন।
এর আগে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ‘ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানেই থাকবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই তার ওপর নির্ভর করছে।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা কী করতে পারি, বলুন? কী করণীয়? করণীয় তেমন কিছু আসলে নেই। ভারতকে রাজি হতে হবে অথবা চাইতে হবে তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি।’
তিনি বলেন, ‘রাজি না হলে তো আসলে কিছু করার নেই। আমরা রাজি করানোর চেষ্টা করে থাকতে পারি। আমরা রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারব, এর চেয়ে বেশি কিছু নয় ‘
তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘ভারতকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান যে নতুন ব্লক তৈরির কথা বলছে, সেখানে বাংলাদেশ চাইলে যুক্ত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতকে বাদ দিয়ে নেপাল বা ভুটানের পক্ষে পাকিস্তানের সঙ্গে গ্রুপিং করা সম্ভব নয়। আমাদের কথা বাদ দিলাম। আমাদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু নেপাল বা ভুটানের পক্ষে সম্ভব না। তিনি (পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার) একটি কথা বলেছেন, কোনো এককালে হয়তো এটার অগ্রগতি হতেও পারে।’
বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে সম্প্রতি একটি ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এটি এই অঞ্চল ও এই অঞ্চলের বাইরের অন্যান্য দেশকে নিয়ে আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। গত বুধবার ‘ইসলামাবাদ কনক্লেভ’ ফোরামে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একজন জিতলে, অন্যজন হারবে এমন নীতির পক্ষে নই।’
ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু জানে কিনা, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরাও আপনাদের মতোই শুনেছি। এটা আমার কিছু করার নেই, বাংলাদেশেরও কিছু করার নেই। আমরা চাই উনি ফেরত আসুন।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটা একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। দেখা যাক, আমরা কতদূর যেতে পারি। র্যাবের কাজে স্পষ্টত অনেক অগ্রগতি হয়েছে, এটা অনেকে স্বীকার করেন। গত ১৫ বছরে র্যাব যা করেছে, সে তুলনায় কিছু অভিযোগ থাকতে পারে। তবে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এই সরকারের প্রচেষ্টার কোনো অভাব নেই। কারও মানবাধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়, কেউ যেন গুম না হয়, কেউ যেন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার না হয়, এ বিষয়ে আমাদের শতভাগ কমিটমেন্ট আছে।’
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে কোনো শাসকের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনার প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আসলে আমার মনে হয় না এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা আছে। কারণ, আমি দেখতে পাচ্ছি না এ রকম কোনো অভিযোগ আসছে।’
বিগত সরকারের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) নিয়ে আলোচনা চলছে। চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এটা বরং আরও একটু অগ্রগতি হোক। এটা নিয়ে তো বহুদিন ধরে আলোচনা চলছে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, গত ১১ মাসে বাংলাদেশে ২৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কোনো বার্তা এসেছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটার বিস্তারিত তথ্য আমি বলতে পারব না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। কোনো প্রতিষ্ঠান আমার লেভেল পর্যন্ত অন্তত এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দেয়নি।’