ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের দেশ রক্ষার্থে ‘যুদ্ধে’ নামার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধে নামতে হবে। ঘর থেকে বের হয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। যদি তারা এই ‘যুদ্ধে’ নামতে না পারেন, তবে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষের জন্য যুদ্ধে নামতে হবে।’
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কেআইবি মিলনায়তনে দলের যুবদল ও কৃষক দলের নেতাদের নিয়ে আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করে দেশকে রক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত দেশের কোনো রাজনৈতিক দলই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালনার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দেয়নি। একমাত্র বিএনপিই সেটা জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের সময় দেশে মানবাধিকার ছিল না, গুম, খুন এবং নিপীড়ন ছিল স্বাভাবিক বিষয়। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল—আমি চাই না, আমরা কেউ চাই না, আর কারও জীবনে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক।’
তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার জন্মগত। সবাইকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া হবে।’ বিএনপি ক্ষমতায় এলে কোনোভাবেই কারো মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হবে না বলেও তিনি অঙ্গীকার করেছেন।
তারেক রহমান তার ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল ঘোষণা করে বলেছেন, বিএনপি সরকার পরিচালনার সুযোগ পেলে তথাকথিত মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নেবে না, কারণ এসব প্রকল্পে দুর্নীতি হয়। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কোনো মেগা প্রজেক্টে যাবো না, এতে দুর্নীতি হয়। আমরা টাকা খরচ করবো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে।’
তিনি জানিয়েছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্বাস্থ্য খাতে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে, যাদের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই হবেন নারী। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যেন ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় একটি আন্তর্জাতিক ভাষায়ও দক্ষ হতে পারে এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। এছাড়াও, দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখনই বিশেষ উদ্যোগ নিলে আগামী ১০ বছর পর দেশ সুফল পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেছেন, নারী সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে। এর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সারাদেশের নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভীত তৈরি করার কথা জানান তিনি। কৃষি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি কৃষি রফতানি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানান।
পরিবেশ রক্ষায় বিএনপি সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে ২৫ কোটি গাছ রোপণ করা হবে। পাশাপাশি, নগর পরিকল্পনার দিকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া এই তিনটি মন্ত্রণালয় সারাবছর একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বর্তমানে দম বন্ধ করা শহরে খেলার মাঠ নেই।’ এই সমস্যা সমাধানে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে বাজার দরে জায়গা কিনে শিশুসহ সব বয়সি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দেশ গড়ার পরিকল্পনা, কর্মসূচি নেতাকর্মীদের জানাতে বিএনপি সাত দিনের কর্মশালার আয়োজন করেছে। বুধবার, চতুর্থ দিনের কর্মশালায় জাতীয়তাবাদী যুবদল ও কৃষক দলের দায়িত্বশীল নেতারা অংশ নেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী।