সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের খোলপেটুয়া নদীর তীরে চলছে নদীনির্ভর জীবনযাত্রা মেলা। মেলায় উপকূলীয় জীবনযাত্রার অংশ শামুক-ঝিনুক, জাল-এসবের প্রদর্শনী ছিল ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলার দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি গ্রামে আয়োজিত দিনব্যাপী এই মেলায় উপকূলীয় সংস্কৃতি, জীবিকা ও প্রকৃতির সমন্বিত রূপ ফুটে ওঠে।
মেলায় সভাপতিত্ব করেন পদ্মপুকুর ইউনিয়ন গ্রীন কোয়ালিশনের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. আশরাফ হোসেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক, গ্রীন কোয়ালিশন, কামালকাটি একতা যুব সংঘ, কদবেল নারী উন্নয়ন সংগঠন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী আয়োজিত এ মেলার প্রবেশমুখেই দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায় খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষের মাটি, বালি, কাদা ও লোনা জলে ভরা প্রতীকী পাত্র।
মেলায় প্রদর্শিত নদীনির্ভর জীবনযাত্রার জিনিসপত্র।
মেলায় আরও ছিল খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষের নদীর চরে জন্মানো লবণসহনশীল উদ্ভিদ—বাইন, কাঁকড়া, গেওয়া, গড়ান, খলিসা, গোলপাতা ও ধানিগাছের প্রদর্শনী।
মেলায় বারসিক এর সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ইউপি সদস্যা সুক্রী রাণী, গ্রীন কোয়ালিশনের সদস্য বিকাশ কুমার মন্ডল, বারসিক এর কর্মসূচি কর্মকর্তা মফিজুর রহমান, সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা মনিকা পাইক, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক ফ্যাসিলিটেটর স.ম ওসমান গনীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় প্রদর্শিত বিভিন্ন নদীর পানি।
কামালকাটি একতা যুব সংঘের স্বেচ্ছাসেবক গৌরাঙ্গ মন্ডল বলেন, ‘চরের গাছপালা শুধু প্রকৃতির অংশ নয়; এগুলো উপকূলকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। নদী দূষণ, নাব্যতা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের চাপে উপকূল আজ সংকটাপন্ন। নদী রক্ষা করা মানে আমাদের জীবনকে রক্ষা করা।’
নওয়াঁবেকী ছফিরুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনন্যা মন্ডল বলেন, ‘নদীর চর, গাছপালা আর মাছ ধরার সরঞ্জাম দেখে খুব ভালো লেগেছে। বইয়ের বাইরে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ এটি। এখন থেকে নদী রক্ষার সামাজিক উদ্যোগে অংশ নেব।’
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেন, কামালকাটি গ্রামের এ আয়োজন শুধু প্রদর্শনী নয় বরং উপকূলের বাস্তব জীবনচিত্রের এক জীবন্ত পাঠশালা। নদী কীভাবে মানুষের জীবনকে ধারণ করে এবং মানুষ কীভাবে নদীর ওপর নির্ভর করে তারই জীবন্ত নিদর্শন এই নদীনির্ভর জীবনযাত্রা মেলা।