Thursday 11 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উত্তরবঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ শুরু, তাপমাত্রা নেমেছে ৮.৯ ডিগ্রিতে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:০৯ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৭

শৈত্যপ্রবাহ কারণে ঘন কুয়াশা। ছবি: সারাবাংলা

রংপুর: কনকনে হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে উত্তরের জনপদ। রংপুর বিভাগের আট জেলায় চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এতে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এদিকে ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীতের কারণে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আবহাওয়া মোকাবিলা করা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহটি রংপুর বিভাগের আট জেলাজুড়ে (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং গাইবান্ধা) ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৮.৯ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১০-১২ কিলোমিটার। এই বাতাস কুয়াশার সঙ্গে মিলে শীতের তীব্রতা বাড়িয়েছে। তবে দুপুরের পর ঝলমলে রোদ দেখা দিয়েছে, যা কিছুটা স্বস্তি এনেছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে ৯.৮ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১০.৮ ডিগ্রি এবং দিনাজপুরে ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সংজ্ঞা অনুসারে, ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়, যা এখন দেশের উত্তরাঞ্চলে স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। গত আট দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে, সকালে কুয়াশা থাকলেও দুপুরের দিকে রোদের দেখা মিলেছে। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত হিমেল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, মধ্যরাত থেকে কুয়াশা এবং হিমেল বাতাসের কারণে তাপমাত্রা কমছে এবং এই অবস্থা আগামী দুই-তিন দিন থাকতে পারে। ডিসেম্বরের শেষ এবং জানুয়ারির শুরুতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, হিমালয় থেকে আসা ঠান্ডা বায়ুর প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগে জানুয়ারি ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মাইল্ড কোল্ড ওয়েভের প্রভাব বাড়তে পারে, যা পরিবহন এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে। ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে শীতের তীব্রতা বাড়ছে, যা উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিতে চাপ বাড়াচ্ছে।

এদিকে শীতের এই তীব্রতা সবচেয়ে বেশি কাবু করেছে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং শ্রমজীবীদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এই শীতের দাপটে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরতলির রিকশাচালক হোসেন আলী বলেন, ‘কুয়াশায় ১০ হাত দূরেও দেখা যায় না। আর ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থতা বাড়ছে।’

ভ্যানচালক মকবুল মিয়া বলেন, ‘সকালের কুয়াশা সারাদিনের শীতের আভাস দেয়, তবে রোদ উঠলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। আমরা নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছি, কারণ আমাদের তো কাজের জন্য ঘর থেকে বের হতেই হয়, যদিও শীতবস্ত্রের অভাবে আমরা কনকনে ঠান্ডায় কাঁপি।’

রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো বরাদ্দ আসেনি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক দিনের মধ্যে শীতবস্ত্র আসতে পারে।

অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো রোগ বেড়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আল মামুন সরকার লিমন বলেন, ‘আগাম শীতের কারণে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। অভিভাবকদের উচিত সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত গরম পোশাক পরিয়ে রাখা এবং ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করা।’

তিনি বলেন, রংপুর বিভাগে ঠান্ডাজনিত রোগের কারণে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ে, যার মধ্যে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং ডায়রিয়া প্রধান। তাই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা না করে হাসপাতালে আসার উচিৎ, কারণ এতে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই শৈত্যপ্রবাহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অন্তত ছয়টি কোল্ড ওয়েভ আসতে পারে, যার মধ্যে কয়েকটি তীব্র হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, বিগত বছরগুলোতে রংপুরে ঠান্ডাজনিত রোগে হাজারো মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, এবং এ বছরও সেই ধারা অব্যাহত। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, শীত থেকে রক্ষা পেতে গরম পোশাক, সুষম খাবার এবং চিকিৎসা সতর্কতা অবলম্বন করতে। এই শীতের মোকাবিলায় জনসচেতনতা এবং সরকারি সহায়তা বাড়ানো জরুরি, যাতে উত্তরের জনপদের মানুষের দুর্ভোগ কমে।

সারাবাংলা/জিজি
বিজ্ঞাপন

৯ দিনের ব্যবধানে বাড়ল সোনার দাম
১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৪

৭ পুলিশ সুপারকে বদলি
১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫৩

আরো

সম্পর্কিত খবর