Friday 12 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

’২৬-এর নির্বাচন ’৭০-এর মতোই গুরুত্বপূর্ণ, দলগুলোকে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে

গোলাম সামদানী, হেড অব নিউজ
১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:২৬ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৫৫

সকল জলপনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের এই তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।

আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একই দিন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিত হবে গণভোটও। এবার একই দিন গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ কোনো ধরনের বিরতি ছাড়া সকল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদা আর গণভোটের ব্যালট হবে গোলাপি।

বিজ্ঞাপন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টাকে এজন্য সাধুবাদ জানাতে হয়, সরকারের ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যদিও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিল। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে এর মধ্যে তার অবসান ঘটেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে সংশয় জনমনে থাকলেও তা অনেকাংশে কেটে যাবে। আশা করা যায়, শেষ পর্যন্ত একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এই সরকার উপহার দিতে পারবে।

এবারের নির্বাচনের সঙ্গে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের একটা মিল দেখা যাচ্ছে। ’৪৭ সালের দেশ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলেও দীর্ঘ দীর্ঘ ২৩ বছর পর ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল। ’৫৪ সালে যে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন হয়েছিল সেটা ছিল প্রাদেশিক নির্বাচন। ৭০ সালে নির্বাচনটা ছিল ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর পর। এই নির্বাচনে ’৬৯র গণঅভ্যুত্থানের মানুষের যে শোষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রতিফলন দেখা গেছে।

এবারের ইলেকশনটাও সত্তরের মতো এই কারণে যে, দীর্ঘ ১৬ বছর এই দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তরুণদের একটা বিরাট অংশ তারা এবারই ভোট দেবেন এবং এই ভোটাধিকারের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর বহু মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে, গুমের শিকার হতে হয়েছে। ’২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এবারের ইলেকশন। এই ইলেকশনের সঙ্গে জুলাই সনদ যুক্ত হয়ে আছে। যারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবেন তাদের কাঁধে বিরাট দায়িত্ব, এই সনদ বাস্তবায়নের।

’৭০-এর নির্বাচন যেমন স্বাধীনতার গতিপথ তৈরি করেছে, তেমনি এবারের ইলেকশন মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে একটা মাইলফলক। এখানে বলে রাখা ভালো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে চেতনা তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই নামান্তর। যদিও কেউ কেউ ’২৪-কে ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করছে, তা কাম্য নয়। ’৭১ আমাদের স্বাধীন ভূ-খণ্ড দিয়েছে, আর ’২৪ আমাদের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ করে দিয়েছে। ’২৪-এ আমাদের তরুণরা শিখিয়েছে কীভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বুকের রক্ত দিয়ে পরাজিত করতে হয়।

এদিকে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর যারা সরকার গঠন করবে তাদের নিশ্চিতভাবে কিছু সংস্কারের কাজ করতে হবে, গণআকাঙ্ক্ষাকে আমলে নিতে হবে। যেসব রাজনৈতিক দল এই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে নির্বাচনে অংশ নেবে, দলের মেনিফেস্টো তৈরি করবে, পুনর্গঠন কর্মসূচি জনগণের কাছে হাজির করবে, তারাই কেবল আগামী দিনে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আর বাকিরা ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে, তাদের পরিণতি মুসলিম লীগের মতোই হবে। ফলে, নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটা অগ্নিপরীক্ষা। ’৭০ সত্তরের নির্বাচনের অগ্নিপথ ধরে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্বাধীনতার বিপরীতে যেতে থাকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।

এখন পর্যন্ত মাঠের যে পরিস্থিতি তাতে বিএনপির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অনেকে এমনও বলছে যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ২০০ আসনে বিজয়ী হবে। ফলে দলটির কাঁধে এখন অনেক গুরু দায়িত্ব। তারা যদি সেই আওয়ামী লীগের মতোই বিপুল জনসমর্থন পাওয়ার পরও দেশটাকে উলটো পথে নেওয়ার চেষ্টা করে তবে তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হবে। আমরা চাইব, বিএনপি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে। বাংলাদেশকে নানামুখী চক্রান্ত থেকে বাঁচাতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দলটি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।

ঘোষিত সময়ে ইলেকশন হবে কি না? এই নিয়ে সংশয় সবসময় ছিল এবং তার কিছু বাস্তব কারণও আছে। তফসিল ঘোষণার পর এ আশঙ্কা কেটে যাওয়ার কথা। কোনো কোনো মহল বিশেষ করে ’২৪-এর পরাজিত শক্তি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ইলেকশান সঠিক সময় হোক চাইছে না, ইলেকশন যত প্রলম্বিত হবে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার তাদের জন্য সহজ হবে। তারা নানানভাবে বলার চেষ্টা করছে, গত দেড় বছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে, কর্মসংস্থান কমেছে, বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। দেশটাতে জঙ্গির উত্থান ঘটেছে- এমন একটা বার্তাও তারা বহির্বিশ্বে দিতে চায়।

এসব বিষয়ে ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতাকে সজাগ থাকতে হবে। ফ্যাসিস্টদের এই অপতৎপরতা ইলেকশন পর্যন্ত চলতে পারে। তবে আশার কথা এই যে, সরকার নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। অন্ধকারের সকল শক্তিকে পরাজিত করে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে যারা সরকার গঠন করবে, তারা জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু হবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বিজ্ঞাপন

হাদিকে দেখতে ঢামেকে নাহিদ
১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৪৮

আরো

সম্পর্কিত খবর